রবিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র ১৪৩২


কুষ্টিয়ায় বাবা-মায়ের কবরে দাফন করা হবে ফরিদা পারভীনকে


প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:২৩

আপডেট:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৫

ছবি : সংগৃহীত

সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের মরদেহ কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্থানে তার মা-বাবার কবরে তাকে দাফন করা হবে। কবর খননের কাজ করছে গোরস্থান কর্তৃপক্ষ। কখন নামাজে জানাজা ও দাফন হবে সে তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি তারা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মাগরিবের নামাজের পর জানাজা ও দাফন হতে পারে।

লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফরিদা পারভীন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

তার মৃত্যুর খবরে শিল্পী, কলাকুশলী সহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিল্পীর মরদেহ সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে শিল্পীর মরদেহ নেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে, সেখানে আরেকটি নামাজে জানাজা হবে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ কুষ্টিয়াতে নেওয়া হবে। সেখানকার পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে ফরিদা পারভীনকে দাফন করা হবে।

কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানের খাদেম নুরু বলেন, শিল্পী ফরিদা পারভীনের বাবা কুষ্টিয়া হাসপাতালে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে ছোটবেলায় তিনি কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠেন। আমরা একই এলাকার মানুষ ছিলাম। ফরিদা পারভীনের সঙ্গে আমরা ছোটবেলায় খেলাধুলা করতাম। আমরা সমবয়সী হওয়ায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। বড় হওয়ার পরে তিনি কুষ্টিয়ার বাইরে থাকেন। এজন্য যোগাযোগ ছিল না। তবে দেখা হলে আমাদের কথা হতো।

তিনি আরও বলেন, আমি বহু বছর ধরে কুষ্টিয়া গোরস্থানের খাদেম। কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে একটি জায়গায় সর্বপ্রথম তার বাবাকে দাফন করা হয়। এরপর ওই কবরে ফরিদা পারভীনের মাকেও দাফন করা হয়। মা-বাবার সেই কবরে ফরিদা পারভীনের লাশ দাফন করা হবে। আমরা দুপুর একটার দিকে কবর খননের কাজ শুরু করেছি। তার লাশ কুষ্টিয়ায় আসলে জানাজা হবে এরপর দাফন হবে।

ফরিদা পারভীন বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। চলতি বছরে তিন দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। গত ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফরিদা পারভীনকে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার পরই নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

লালনের গানের বাণী ও সুরকে দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুরুতে নজরুলসংগীত ও আধুনিক গান দিয়ে ফরিদা পারভীনের যাত্রা শুরু হয়। তবে তার সংগীত জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। বাংলাদেশের লালনসংগীতের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে।

স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ার দোলপূর্ণিমার মহাসমাবেশে প্রথমবারের মতো লালনের গান পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন। শুরুতে অনীহা থাকলেও বাবার উৎসাহে মকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনের গান শেখা শুরু করেন। এরপর খোদা বক্স সাঁই, করিম সাঁই, ব্রজেন দাসসহ গুরুপরম্পরার সাধকদের কাছে তালিম নিয়ে লালনের গানকে তিনি কণ্ঠে ধারণ করেন। এরপর লালনের গান ফরিদা পারভীন দেশ-বিদেশে বা বিশ্বমঞ্চে ছড়িয়ে দিয়েছেন । জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশে তার কণ্ঠে বেজেছে লালনের দর্শন।

কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন ১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে ১৪ বছর বয়সে তার পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। এরপর গানে গানে তিনি কাটিয়েছেন ৫৫ বছর।

সঙ্গীতে অবদানের জন্য ফরিদা পারভীন ১৯৮৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। অন্ধ প্রেম চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী সঙ্গীত শিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৮ সালে তিনি ফুকুওয়াকা এশীয় সাংস্কৃতিক পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস ও অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার পেয়েছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top