'আল্লাহর কসম, সাংবাদিক হিসেবে আমার কর্তব্য পালন করেছি'
প্রকাশিত:
২৫ মার্চ ২০২৫ ১২:০২
আপডেট:
২৬ মার্চ ২০২৫ ০৩:৪৪

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় আরো দুই গণমাধ্যম কর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে আল জাজিরার একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
উত্তর গাজায় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) আল জাজিরার নিহত ওই সাংবাদিকের নাম হোসাম শাবাত। মৃত্যুর আগে তিনি বিশ্ববাসীকে এক আবেগঘন বার্তা পাঠিয়ে গেছেন। তার মৃত্যুর পর সহকর্মীদের তা পোস্ট করতে বলে গেছেন।
এতে তিনি লিখে গেছেন, আল্লাহর কসম- আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার কর্তব্য পালন করেছি। সত্য প্রকাশের জন্য আমি সব ঝুঁকি মাথা পেতে নিয়েছি এবং অবশেষে গত ১৮ মাসের ক্লান্তি শেষে এখন আমি বিশ্রামে (চিরনিদ্রায়) আছি।
আমি এই সবকিছু করেছি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে। আমি বিশ্বাস করি এই ভূমি আমাদে এবং এটিকে রক্ষা করতে এবং এর সেবা করতে মৃত্যুবরণ করা আমার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান।
আমি এখনো তোমাদের কাছে অনুরোধ করছি, গাজা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করো না। বিশ্বকে চোখ ফিরিয়ে নিতে দিও না। লড়াই চালিয়ে যাও, আমাদের গল্প বলতে থাকো - যতক্ষণ না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জারিয়েছেন, বেইত লাহিয়ার পূর্ব অংশে মঙ্গলবার তার গাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে। তিনি আল জাজিরা মুবাশ্বেরে কাজ করতেন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার তারেক আবু আযম বলেন, ২৩ বছর বয়সী শাবাত এর আগেও আরেকটি ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি গাজার সংবাদ প্রচার চালিয়ে যান।
আবু আযম বলেন, কোনও পূর্ব সতর্কীকরণ ছাড়াই” ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তার গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
শাবাতের সহকর্মীরা তার শেষ কথাগুলো শেয়ার করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে শাবাতের লেখা একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, যদি আপনি এটি পড়ে থাকেন, তাহলে ধরে নেবেন আমি নিহত হয়েছি- সম্ভবত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।
শাবাত লিখেছেন, গত ১৮ মাসের যুদ্ধে, তিনি “প্রতিটি মুহূর্ত” তার জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন।
তিনি আরো লিখেছেন, আমি উত্তর গাজার ভয়াবহতা মিনিটে মিনিটে নথিভুক্ত করেছি, তারা যে সত্যকে কবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তা বিশ্বকে দেখানোর জন্য আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমি ফুটপাতে, স্কুলে, তাঁবুতে — যেখানেই পেরেছি ঘুমিয়েছি। প্রতিটি দিন ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। আমি মাসের পর মাস ধরে ক্ষুধা সহ্য করেছি, তবুও আমি কখনো আমার দেশের জনগণের পক্ষ ত্যাগ করিনি।
শাবাত আরো লিখেছিলেন, আমি এখন আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, গাজা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করবেন না। বিশ্বকে চোখ এড়িয়ে যেতে দেবেন না। লড়াই চালিয়ে যান, আমাদের গল্প বলতে থাকুন- যতক্ষণ না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়।
এদিকে সোমবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় প্যালেস্টাইন টুডের সাংবাদিক মোহাম্মদ মনসুরও নিহত হয়েছেন।
আবু আযম বলেন, মনসুরকে তার বাড়িতে ... তার স্ত্রী এবং ছেলেসহ হত্যা করা হয়েছে। এখানে হামলা চালানো হয়েছে কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস (জিএমও) অনুসারে, দুই সাংবাদিকের হত্যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত মিডিয়া কর্মীর সংখ্যা ২০৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে জিএমও বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোকে গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং মিডিয়াকর্মীদের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতিগত হত্যার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: