ইয়েমেনে বাঁচার জন্য সহায়তা প্রয়োজন ২ কোটি মানুষের : জাতিসংঘ
প্রকাশিত:
২৭ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫৪
আপডেট:
৩০ মার্চ ২০২৫ ২২:০৬

যদি মানবিক সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপীড়িত দেশ ইয়েমেনে বেঁচে থাকার জন্য সহায়তার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল ২ কোটি মানুষ। জাতিসংঘের শরণার্থী নিরাপত্তা বিষয়ক অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ১১ তম বছরে পা রেখেছে ইয়েমেনের সংঘাত। শিগগিরই এই সংঘাত থামার কোনো সম্ভাবনা যেমন নেই, তেমনি জনগণের ভোগান্তি লাঘবের আশাও নেই।
“বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্পটলাইট থেকে অনেকখানি সরে গেছে ইয়েমেনের যুদ্ধ। কিন্তু সেখানকার মানুষের ভোগান্তি একটুও কমেনি। সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ নেই এবং দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে সেখানে বসবাসরত লোকজনদের পরিস্থিতি।”
“বর্তমানে ইয়েমেনে সহায়তার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল প্রায় ২ কোটি মানুষ। সহায়তার প্রবাহ ব্যাহত হলে তাদের জীবন ধারণ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এই ২ কোটির মধ্যে ৪৮ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত।”
এদিকে ইয়েমেনের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের দরিদ্র দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মূল লক্ষ্য ইয়েমেনের সীমান্ত দিয়ে সৌদি আরব কিংবা আমিরাতে পৌঁছানো। আইওএমের হিসেব অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই ইয়েমেনে গেছেন ৬০ হাজার ৯০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী।
কিন্তু সীমান্তে কড়া নজরদারির কারণে তাদের অনেকেই আটকা পড়েছেন সেখানেই, ফলে ইয়েমেনের মানবিক বিপর্যয় দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ইয়েমেনের শিশু ও নারীর।
“যদি সংঘাত থামানোর জন্য তৎপরতা ও মানবিক সহায়তার প্রবাহ ব্যাহত হয়, তাহলে ইয়েমেনে প্রতিদিন বাড়বে মৃত্যুর হার, এবং এখনও যেসব ইয়েমেনি একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, তা চিরতরে মুছে যাবে।”
গত ৭ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত ইয়েমেনে অস্থিরতার সূত্রপাত হয় ২০১৪ সালে, যখন দেশটির আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে রাজধানী সানা দখল করে নেয় ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা।
হাদির সরকারকে ফের ক্ষমতাসীন করতে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সৌদি-ইয়েমেন-আমিরাত সামরিক জোট।
কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি। বর্তমানে ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: