ইসরায়েল ‘গণহত্যাকারী’, বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা স্পেনের
প্রকাশিত:
১৫ মে ২০২৫ ১২:৪৭
আপডেট:
১৫ মে ২০২৫ ২০:১৮

ইসরায়েলকে প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রের সঙ্গে স্পেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে স্পেনের কাতালান রাজ্যের এমপি গ্যাব্রিয়েল রাফিয়ান ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য সানচেজের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনাও করেন তিনি।
সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় নিজ বক্তব্যে সানচেজ বলেন, “আমি এখানে একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জনাব রাফিয়ান— একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা আর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখছি না। (ইসরায়েরের সঙ্গে) কোনো বাণিজ্য হবে না।”
এমপি গ্যাব্রিয়েল রাফিয়ান স্পেনের বামপন্থি রাজনৈতিক দল সুমার পার্টির একজন নেতা। এই দলটির সঙ্গে জোট রয়েছে সানচেজের নেতৃত্বাধীন স্প্যানিশ সোস্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির। স্পেনের বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্দা দিয়াজ সুমার পার্টির শীর্ষ নেতা।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে স্পেন। তবে বুধবারেই এই তথ্য প্রথম জনসমক্ষে আনলেন সানচেজ।
এদিকে ইসরায়েলি বিভিন্ন সংবাদামাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের বুধবারের মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে কর্মরত স্পেনের রাষ্ট্রদূত আনা সলোমনকে তলব করে কড়া বার্তা দিয়েছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, গাজা উপত্যকায় গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫২ হাজার ৯০০ এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪৬ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত ১ মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ ঘোষণা দিয়েছে যে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হবে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধবন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: