সোমবার, ২রা জুন ২০২৫, ১৯শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


মাথা-গলার ক্যানসারে ব্যবহৃত ওষুধে মিলল যুগান্তকারী ফল


প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২৫ ১৮:০৮

আপডেট:
২ জুন ২০২৫ ১১:২০

ছবি সংগৃহীত

ক্যানসারের মধ্যে মাথা ও গলার ক্যানসার নিরাময়ের চিকিৎসা সবচেয়ে কঠিন। এ স্থানগুলোর কোথাও ক্যানসার হলে বাঁচার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়। তবে একটি ইমিউনথেরাপি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মিলেছে যুগান্তকারী ফলাফল। যা এই ক্যানসার ফিরে আসাকে বাধা দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শনিবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ট্রায়ালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাথা ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসায় এই ওষুধটি গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো সাফল্য।

লরা মার্টসন নামে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের এক নারীর ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, তিনি যে এখনো বেঁচে আছেন এটি তার কাছে অবাক করার বিষয়। কারণ ছয় বছর আগে তার জিহ্বার ক্যানসার ধরা পড়লে তাকে বলা হয় তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। ক্যানসারটি ওই সময় তার ঘাড় ও অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল।

তার দেহ থেকে ক্যানসার দূর করতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এই অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে তিনি ইমিউনথেরাপি ওষুধটি গ্রহণ করেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, শরীরে যদি আবারও ক্যানসার ফিরে আসে তখন এই ইমিউনথেরাপি সেটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কাজ করে।

মাথা ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসা বেশ কঠিন। গত ২০ বছর ধরে এই স্থানের ক্যানসার চিকিৎসায় প্রায় একইরকম পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

কেউ মাথা ও গলার কঠিন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে সাধারণত পাঁচ বছরের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

২০১৯ সালে লরা মার্টসন যখন ক্যানসারে আক্রান্ত হন তখন তাকে বলা হয় তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৩০ শতাংশ। প্রথমে তার জিহ্বার নিচে আলসার ধরা পড়েছিল। কিন্তু এটি সারছিল না। পরবর্তীতে যা ক্যানসারে পরিণত হয়।

ওই সময় তার জিহ্বা কেটে ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া তার গলার লিম্ফ নোডও কাটতে হয়। এরপর তাকে নতুন করে কথা বলা ও খাবার খাওয়া শিখতে হয়।

ক্যানসার চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারে আন্তর্জাতিক গবেষণার অংশ হিসেবে লন্ডনের ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা ৩৫০ জনের ওপর পেমব্রোলিজুমাব নামের ইমিউনথেরাপি ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। যা তাদের অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যে এই ট্রায়ালের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রফেসর কেভিন হেরিংটন। তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, নতুন গবেষণায় ওষুধটি অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে দেওয়া হয়েছে। এতেই পাওয়া গেছে যুগান্তকারী ফল। তিনি বলেন, “আমরা (অস্ত্রোচপারের আগে) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যানসারের টিউমারকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেই যেন টিউমার বিরোধী প্রতিরোধের সৃষ্টি হয়। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যানসারের টিউমার অপসারণের পর ওই প্রতিরোধের কার্যকারিতা ধরে রাখতে টানা এক বছরের বেশি সময় ওষুধটি প্রয়োগ করতে থাকি।”

৩৫০ জন রোগীকে যখন এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয় ঠিক তখনই আরও ৩৫০ জন রোগীকে পুরোনো পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। যাদের সবার মাথা ও গলার এক জায়গায় ক্যানসার হয়েছিল। কিন্তু ক্যানসারটি শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়েনি।

গবেষণায় নতুন পদ্ধতিটি ইতিবাচক ফলাফল দেখিয়েছে। ওষুধটি এই পদ্ধতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্যানসার মুক্ত থাকার সময় দ্বিগুণ করে দিয়েছে। গড়ে এটি আড়াই বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীতি হয়েছিল।

তিন বছর পর দেখা গেছে যেসব রোগীকে পেমব্রোলিজুমাব ওষুধটি দেওয়া হয়েছে তাদের শরীরে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি ১০ শতাংশ কম ছিল।

লরা নামের ওই নারী জানিয়েছেন, এ ওষুধটি তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। তিনি এখনো স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।

গবেষকরা বলেছেন, এই ওষুধটি মাথা ও গলার ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের আগে দেওয়াটা বেশি জরুরি। কারণ এরমাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই শিখিয়ে দেয়।

সূত্র: বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top