দ্য ল্যানসেটের গবেষণা
২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে লিভার ক্যান্সারের হার
প্রকাশিত:
২৯ জুলাই ২০২৫ ১৫:১৯
আপডেট:
৩০ জুলাই ২০২৫ ০০:৫৮

বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারের হার ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি মদ্যপান, হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ ও অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলোর লাগাম টানা না হয়, তবে আগামী কয়েক দশকে লিভার ক্যানসার একটি মারাত্মক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হতে পারে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর।
বর্তমানে প্রতি বছর সারা বিশ্বে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। গবেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ১৫ লাখ ২০ হাজারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি’-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণায় দেখা গেছে, লিভার ক্যানসার বর্তমানে বিশ্বের ছয় নম্বর সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার, তবে এতে মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি—এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী ক্যানসার। গবেষণাটি বলছে, শুধু ২০৫০ সালেই লিভার ক্যানসারে মারা যেতে পারেন প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।
প্রতিরোধযোগ্য হলেও ঝুঁকি বাড়ছেই
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি তিনজন লিভার ক্যান্সার রোগীর মধ্যে দুইজনের রোগই প্রতিরোধযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মের পরপর হেপাটাইটিস-বি টিকা প্রদান, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং মদ্যপান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তবে আফ্রিকার মতো নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে এখনও হেপাটাইটিস-বি টিকাদানের হার আশঙ্কাজনকভাবে কম। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।
মদ্যপান ও স্থূলতার প্রভাব বাড়ছে
গবেষণাটি জানায়, ২০৫০ সালে লিভার ক্যান্সারের জন্য মদ্যপান দায়ী থাকবে ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে, যেখানে ২০২২ সালে এই হার ছিল ২১ শতাংশ। একইভাবে, স্থূলতা ও ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত চর্বিযুক্ত লিভার রোগ, যা আগে পরিচিত ছিল ‘অ্যালকোহলবিহীন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ নামে, ২০২২ সালে মোট লিভার ক্যান্সারের ৯ শতাংশের জন্য দায়ী থাকলেও ২০৫০ সালে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১১ শতাংশে।
এই ধরনের রোগকে বর্তমানে বলা হয় ‘মেটাবলিক কর্মহীনতা-সম্পর্কিত চর্বিযুক্ত লিভার রোগ’, যা মূলত অতিরিক্ত ওজন ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে সতর্কবার্তা
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত গবেষণাটি আরও জানায়, শুধু চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিই হতে হবে লিভার ক্যান্সার মোকাবেলার মূল হাতিয়ার। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত এখনই যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, নইলে ভবিষ্যতে এই রোগ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তথ্যসূত্র: ল্যানসেট চিকিৎসা সাময়িকী, গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি
ডিএম /সীমা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: