বুধবার, ১৩ই আগস্ট ২০২৫, ২৯শে শ্রাবণ ১৪৩২


ভারতে সারোগেসির আড়ালে শিশু কেনা-বেচার চাঞ্চল্যকর তথ্যে তোলপাড়


প্রকাশিত:
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১২:২৪

আপডেট:
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১৬:০৭

ছবি সংগৃহীত

ভারতের হায়দরাবাদ শহরের সেকেন্দ্রাবাদে অবস্থিত নামকরা ইউনিভার্সাল সৃষ্টি ফার্টিলিটি সেন্টার। বহু বছর ধরেই সারোগেসি ও আইভিএফ চিকিৎসায় সুনাম গড়ে তুলেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশজুড়ে একাধিক শাখা, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, আধুনিক চিকিৎসা অবকাঠামো—সব মিলিয়ে অসংখ্য নিঃসন্তান দম্পতির শেষ আশ্রয় হয়ে উঠেছিল এই কেন্দ্র।

কিন্তু রাজস্থানের এক দম্পতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হতেই বেরিয়ে আসে এক মর্মান্তিক ও অমানবিক সত্য—সারোগেসির নামে চলছে শিশু কেনা-বেচার এক সুবিশাল অপরাধচক্র।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, ক্লিনিকটির মাধ্যমে বহু দম্পতির হাতে যে নবজাতক তুলে দেওয়া হয়েছে, তারা আদৌ সারোগেসি পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশু নয়। বরং, কোনো গরিব পরিবার বা অবিবাহিত মায়ের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে শিশু কিনে সেগুলোকে সারোগেট বেবি হিসেবে দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হতো। এই প্রতারণার জন্য একেক দম্পতির কাছ থেকে ১৯ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত রাজস্থানের এক দম্পতির সন্দেহ থেকে। তারা ডিএনএ পরীক্ষায় জানতে পারেন, শিশুটির সঙ্গে তাদের কোনো জিনগত মিল নেই। অভিযোগ দায়েরের পর গোপালপুরম থানার পুলিশ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ক্রমে নতুন নতুন মামলা জমা হতে থাকে। এক দম্পতিকে ২২ লক্ষ টাকা নিয়ে মৃত শিশু দেখানো হয়, আরেকজনকে প্রি-টার্ম বেবি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীদের অনেকে এই প্রতারণা প্রকাশ পাওয়ার পর সন্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হন, যাদের মধ্যে কয়েকজন এখন সরকারি হোমে রয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে ড. আথলুরি নাম্রতার নাম। যার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই হায়দরাবাদ, বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া ও গুন্টুরে প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে। এই কাণ্ডে তার ছেলে, এক আইনজীবীসহ মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি ৯০ বছরের এক প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের নাম ও লাইসেন্সও তার অজান্তে ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেলেঙ্গানা সরকার জরুরি ভিত্তিতে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যারা রাজ্যের সমস্ত সারোগেসি ও আইভিএফ সেন্টারের কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে। এছাড়া, মামলাটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তে ইঙ্গিত মিলছে যে, হাওয়ালা চ্যানেলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

এই ঘটনা শুধু ভারতের নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সারোগেসি শিল্পের ওপর আস্থা নষ্ট করতে পারে। মানবিকতার নামে ব্যবসা, চিকিৎসার আড়ালে অপরাধ—এ যেন আধুনিক সভ্যতার জন্য এক সতর্কবার্তা।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top