একটি হ্যান্ডশেকের ‘ময়নাতদন্ত’
প্রকাশিত:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৩৭
আপডেট:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১৭:৩৪

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হ্যান্ডশেক কেবল একটি সাধারণ করমর্দন নয়, এটি বিশ্ব রাজনীতির জটিল মেরুকরণের একটি প্রতীক। বিশেষ করে ইউক্রেন এবং ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে। বিশ্বরাজনীতির শীর্ষ দুই নেতার হাত মেলানোর তাৎপর্য দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক—
১.
কোনোকিছুকেই আমরা এখন সহজে বিশ্বাস করতে পারি না। অ্যাংকারিজ সম্মেলনে ট্রাম্প ও পুতিনের যেমন ছবি পাওয়া গেছে, ক্যামেরায় এর চেয়ে ভালো ছবি কমই ওঠে। লাল গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আর তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে চারটি আমেরিকান এফ-৩৫ এবং একটি বি-২ বোমারু বিমান। বিমানগুলোর লক্ষ্য তিনিই। তার বিমানকে ‘এসকর্ট’ করে নিয়ে গিয়েছিল আমেরিকান যুদ্ধবিমান, তাই তিনি তখনও আসলে আমেরিকান সামরিক শক্তির দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। এক ঝলকে ট্রাম্পের এই কূটনীতিতে ছিল হুমকি মেশানো খোশমেজাজি বার্তা। অ্যাংকারিজে নাটক হচ্ছিল, তবে একই সাথে কূটনীতিও চলছিল।
খেলা এখন শেষের দিকে। জেলেনস্কিকে সম্ভবত এবার নতি স্বীকার করতে হবে। ইউক্রেন তার অন্তত এক-পঞ্চমাংশ ভূমি হারাবে, এরই মধ্যে হাজারো প্রাণও গেছে। ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এখন দায়িত্ব জেলেনস্কির ওপর, যার সঙ্গে তিনি আজ ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করছেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, জেলেনস্কির দাবি-দাওয়া এখন একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে এসেছে: আলোচনার টেবিলে একটি জায়গা এবং যৌক্তিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।
ভ্লাদিমির পুতিনও তার অবস্থানে পরিবর্তন এনেছেন। অন্যান্য দেশগুলোর ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার (secondary sanctions) হুমকির কারণে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তার সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির শর্তাবলীতে সৈন্যদের সংখ্যা নিয়ে পুরনো দাবিগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে, যা একসময় তার জন্য ‘রেড লাইন’ বা অলঙ্ঘনীয় সীমা ছিল। এমনকি তিনি দোনেৎস্কের কিছু অংশের বিনিময়ে খারকিভ এবং সুমির কিছু অংশ ছেড়ে দিতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ওয়াশিংটন বৈঠকের আগেই ট্রাম্পের নোবেল মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিফলন যে তিনি চুক্তিটি সম্পন্ন করতে পারবেন। একইভাবে, ট্রাম্পের কৌশলগত পরিবর্তনও চোখে পড়ার মতো— তিনি এখন আর কেবল ‘যুদ্ধবিরতি’ চাইছেন না, বরং ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিচ্ছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ এখন আর শুধু কৌশলগত জয় বা পরাজয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই যুদ্ধ অন্তহীন ক্ষতির একটি রুটিনে পরিণত হয়েছে। সৈন্যরা সেখানে যেন আধুনিক ভূমিদাস। তাদের জীবন তাদের নিজেদের হাতে নেই, যুদ্ধের নির্মমতার কাছে তারা জিম্মি। শুধু সম্মুখ সমরে থাকা যোদ্ধারাই নয়, পেছনে থাকা সাধারণ পুরুষরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এর চেয়েও মর্মান্তিক হলো, ড্রোন হামলায় নারী ও শিশুদেরও নিয়মিত হত্যা করা হচ্ছে।
ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে ইউক্রেনীয়দের জীবনকে ব্যবহার করে রাশিয়াকে দুর্বল করতে চাইছে। এতে তাদের নিজেদের সামরিক বা অর্থনৈতিক কোনো বড় ক্ষতি হচ্ছে না। এটি এক ধরনের প্রক্সি যুদ্ধ, যেখানে ইউক্রেন ফ্রন্টলাইন হিসেবে কাজ করছে। ন্যাটোর মহাসচিবের কথায় স্পষ্ট, ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সময় দিচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে ইউরোপ নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারছে।
পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ইউক্রেনীয়রা ‘সাহসী যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত হলেও, তারা আসলে রক্ত-মাংসের মানুষ যারা স্বাভাবিক জীবন এবং শান্তি চায়। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই যুদ্ধ তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে এবং জীবন ধারণের মৌলিক ইচ্ছাকে ক্ষুণ্ণ করছে। ইউক্রেন এখন এতটাই নাজুক অবস্থায় আছে যে এর সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এর ফলে বিদ্রোহ বা গৃহযুদ্ধ, অভ্যুত্থান বা একনায়কতন্ত্রের মতো বিভিন্ন ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।
রাজনৈতিকভাবে, এই যুদ্ধ কেবল পুতিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রাচীরের বদলে একটি পর্দার মতো কাজ করায় রাশিয়ার অর্থনীতি টিকে গেছে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ইউরোপ নিজেদের পুনরায় সামরিকীকরণে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চীন সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। রাশিয়া এখন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা রাশিয়াকে চীনের কাছে একটি ‘অনুগত রাষ্ট্রে’ পরিণত করেছে। চীন কম দামে রাশিয়ার জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য পাচ্ছে এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব বাড়াচ্ছে।
অবশেষে সব পক্ষের স্বার্থ মিলে গেল। ট্রাম্প চান রাশিয়ার তেল বাজারে ফিরিয়ে এনে তেলের দাম কমাতে, ইউক্রেনের দুষ্প্রাপ্য খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ পেতে এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে। ইউরোপ চায় ইউক্রেনের পতন ঠেকাতে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মানবিক দিকটি হলো ইউক্রেনীয় জনগণের চাওয়া। তারা কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক লাভের হিসাব করছে না, বরং শুধু এই ভয়াবহ যুদ্ধ এবং রক্তপাতের অবসান চায়। তাদের কাছে শান্তিই সবচেয়ে বড় চাওয়া।
অ্যাঙ্কারিজ সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এক মাস আগে থেকেই, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দুর্বল করার জন্য একটি সমন্বিত প্রচারণার মাধ্যমে। ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রগুলো এতদিন কিয়েভের সমালোচনা না করার যে অলিখিত নিয়ম মেনে চলছিল, তা তুলে নেওয়া হয়। রাতারাতি পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো জেলেনস্কির প্রশাসনের সম্ভাব্য দুর্নীতির দিকে মনোযোগ দেয়। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে “কার্ডবোর্ড প্রতিবাদ” শুরু হয় এবং একটি জরিপে (গ্যালাপ) দেখা যায় যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইউক্রেনীয় যুদ্ধের অবসানের পক্ষে।
নির্মম সত্য হলো, লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয়ের মৃত্যু হয়েছে ওয়াশিংটনের কাপুরুষোচিত ‘সংঘাত ব্যবস্থাপনা’ কৌশলের কারণে। এই কৌশল ওবামা, বাইডেন এবং ট্রাম্প—সবার আমলেই একই রকম ছিল। এটি ছিল রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির এক পঙ্গুত্ব, যাকে বিচক্ষণতা বলে ছদ্মবেশে দেখানো হয়েছে। পুতিন ঠিক এটাই ভেবেছিলেন: পশ্চিমারা দাঁতহীন (শক্তিহীন) প্রমাণিত হবে এবং সেখানে নেতাদের পরিবর্তে শুধু ব্যবস্থাপকরাই থাকবেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অ্যাঙ্কারিজে তাকে এত আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল।
এই গল্পটি হৃদয়বিদারক, কিন্তু এর শেষ এখনো হয়নি। এখন আসল প্রশ্নটা ইউরোপের জন্য, যারা বর্তমানে পেছনের আসনে রয়েছে। ইউক্রেনে এবং সেই সাথে পুরো ইউরোপ মহাদেশে একটি স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা নির্ভর করছে ইউরোপের এই উপলব্ধি করার ওপর যে, রাশিয়ার পশ্চিমাভিমুখী অগ্রযাত্রা ঠেকানোর মানে হলো একটি কার্যকর নতুন ইউক্রেন গড়ে তোলা: যা ড্রোন হামলা এবং একই সাথে দুর্নীতি থেকে সুরক্ষিত থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে ইউক্রেনের বাস্তুচ্যুত মানুষজন নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে আসতে পারবে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে।
ইউরোপকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ পুতিন চুপ করে বসে থাকবেন না। এই ‘নতুন শীতল যুদ্ধ’ এখনও পুরোপুরি প্রকাশ্য রূপ নেয়নি, তবে এর আগুন ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। অর্থাৎ, দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও অবিশ্বাস বাড়ছে, যা যেকোনো সময় একটি বড় সংকটে পরিণত হতে পারে।
মূল লেখা— আনাস্তানিয়া পিলিয়াভস্কি, প্রফেসর, কিংস কলেজ লন্ডন।
২.
রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক কেন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষের নেতারাই এটিকে স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ বলে বর্ণনা করছেন? কারণ, ১৯৯১ সালে যে প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল, তা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়তে শুরু করে, যখন ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে তার সম্প্রসারণ ঘটায়। এরপর ২০১৪ সালে ইউক্রেনের মাইদান বিপ্লবের ফলে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়, যা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের শুরুর পূর্বাভাস দেয়।
অবশ্যই ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিতে হয় যে, ২০১৮ সালে পুতিনের সঙ্গে তার প্রথম বৈঠকের পর তিনি অকপটে বলেছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধ বাইডেনের কারণেই হয়েছে এবং এই যুদ্ধ কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না।
অতি সম্প্রতি, অবিশ্বাস্য হলেও, ভারতসহ অন্যান্য দেশের দিকেও আঙুল তোলা হয়েছে। যদি কাউকে দোষারোপ করাই এখনকার স্বাভাবিক রীতি হয়, তাহলে আসল সত্যটা বলা জরুরি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় সংঘাত শুরু হওয়ার জন্য ভারতের তেল কেনা দায়ী নয়, বরং দায়ী হলো দূরদৃষ্টিহীন, নীতিহীন এবং অবিবেচক নেতৃত্ব।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে যত বাগাড়ম্বরই হোক না কেন, আসল হাজার বছরের যুদ্ধ হলো পশ্চিম এবং রাশিয়ার মধ্যে। তারাই এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছে যে তাদের সাহায্য দরকার, যেন প্রতি কয়েক বছর পরপর বিশ্বকে গ্রাস করা যুদ্ধ ও ধ্বংসের চক্র থেকে তারা রক্ষা পায় এবং একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে শেখে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আলাস্কায় গিয়েছিলেন কৌশলগত এমন অবস্থান রেখে যেখানে তার পরোক্ষ লক্ষ্য ছিল ভারত। এর মানে কি এই যে ভারত অবশেষে বৈশ্বিক মঞ্চে পদ্ধতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যার কর্মকাণ্ড প্রধান পরাশক্তিগুলোর আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে? এই ধরনের চাপের মুখেও ভারত তার নিজস্ব কৌশলগত অবস্থান থেকে সরে আসেনি। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেকার উত্তেজনা কমানো এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য যেকোনো শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ভারতের জন্য ভালো। এর ফলে ভারত তার পররাষ্ট্রনীতি আরও সহজে পরিচালনা করতে পারবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলোকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক সহজ ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব এবং রাশিয়ার উভয়ের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে।
এটি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, এমনকি আমেরিকান নেতারাও স্বীকার করেন যে রাশিয়ার কাছে প্রচুর এবং মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, এবং তাদের চোখ সেগুলোর দিকেই। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের দৌড়ে ভারত একা থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোও সেই সুযোগ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এর ফলে ভারতের জন্য রাশিয়ার বাজারে প্রবেশ এবং বাণিজ্য করা আগের মতো সহজ থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে চীনের। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া থেকে দূরে সরে গেলে চীন একচেটিয়াভাবে রাশিয়ার সম্পদ এবং বাজার ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এবং পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ফিরে এলে চীনের সেই অবাধ সুযোগ হুমকির মুখে পড়বে।
‘আলাস্কা প্রক্রিয়া’ বা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যেকার শান্তি আলোচনা পুতিনের অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করবে এবং এর ফলে সম্ভবত ভারত থেকে তার মনোযোগ সরে যাবে। ১৯৯০-এর দশকে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন যখন ক্ষমতায় ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্কের সোনালি দিনগুলোতে আমরা এমন পরিস্থিতি দেখেছি। এমন একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ভারত থেকে এমন আশা করা যায় না যে, তারা সেইসব সম্পর্ক ছিন্ন করবে, যা থেকে অন্যরা লাভবান হতে চাইছে।
যদি আলাস্কা প্রক্রিয়া সফল হয়, তবে এটি ট্রাম্পের জন্য একটি ব্যক্তিগত বিজয় হবে। তিনি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন। এই সাফল্য তাকে অন্যান্য জটিল সংঘাত সমাধানে আরও সাহসী করে তুলবে। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত তার মনে ইতিমধ্যেই যুক্ত আছে। তবে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো চীন। রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে সরিয়ে দেওয়ার পর ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য হবে চীন। এটি একটি নতুন বৈশ্বিক মেরুকরণ তৈরি করবে। এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক ভালো হয়, তাহলে চীন আন্তর্জাতিকভাবে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। ভারতকেও তার নিজস্ব কৌশল ঠিক করতে হবে, যাতে সে দুটি পরাশক্তির মধ্যেকার নতুন প্রতিযোগিতায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ আবারও প্রমাণ করে যে একটি বৈশ্বিক পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কতটা জটিল। ইউক্রেন সংকটের মতো ঘটনায় ছোট বা দুর্বল দেশগুলো পরাশক্তিগুলোর স্বার্থের খেলায় বলি হতে পারে। ‘আলাস্কা প্রক্রিয়া’ নিয়ে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেকার এই শান্তি আলোচনা আদৌ সফল হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই ভারত কোনো একক পক্ষে ঝুঁকে না পড়ে বরং তার সব বিকল্প খোলা রাখছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই অবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ভারত চায় এই সম্পর্ক যেন রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্কের মতো তিক্ত না হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: