শুক্রবার, ২২শে আগস্ট ২০২৫, ৬ই ভাদ্র ১৪৩২


চীন সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার গোপন ঘাঁটি, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ


প্রকাশিত:
২১ আগস্ট ২০২৫ ২১:৫৮

আপডেট:
২২ আগস্ট ২০২৫ ০০:২৮

ছবি সংগৃহীত

চীন সীমান্তের কাছে উত্তর কোরিয়ার একটি গোপন (পূর্বে অপ্রকাশিত) ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির সন্ধান পাওয়ো গেছে, যা পূর্ব এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি’ সৃষ্টি করতে পারে। বুধবার (২০ আগস্ট) ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) এর একটি নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ‘সিনপুং-ডং’ নামে এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিটি চীন সীমান্ত থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটিতে ৯টি পারমাণবিক সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) এবং এর মোবাইল লঞ্চার সংরক্ষিত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।।

সিএসআইএস তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এই ঘাঁটিটি উত্তর কোরিয়ার ১৫ থেকে ২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং ওয়ারহেড স্টোরেজ সুবিধার মধ্যে একটি। এটি উত্তর কোরিয়া কখনোই প্রকাশ করেনি।

সিএনএন জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ, উত্তর কোরিয়ার শরণার্থী ও কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার, গোপনীয়তামুক্ত নথি এবং ওপেন-সোর্স ডেটার ভিত্তিতে তৈরি করেছে সিএসআইএস।

প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পূর্ব এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের জন্য সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি সৃষ্টি করে।’

গত কয়েক বছরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের অধীনে অস্ত্র কর্মসূচি বেশ ত্বরান্বিত হয়েছে। তারা দ্রুত সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীক করছে, নতুন অস্ত্র উন্নয়ন করছে এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে পারে।

এদিকে, এই পদক্ষেপগুলো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন, যা উত্তর কোরিয়ার উপকরণ এবং অস্ত্রের অ্যাক্সেসকে কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া, ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে তার সহযোগিতাও বাড়িয়েছে। ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠিয়েছে- যার ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে মস্কো বিনিময়ে পিয়ংইয়ংয়ের প্রযুক্তি এবং সরবরাহ লাইনকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গোপন ঘাঁটিটি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করার প্রচেষ্টার অংশ, যা একটি সরু পাহাড়ি উপত্যকায় অবস্থিত। এর বিস্তৃতি প্রায় ২২ বর্গকিলোমিটার (৫ হাজার ৪৩৬ একর), যা নিউ ইয়র্কের কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়েও বড়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তের কাছে এর অবস্থান ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক - যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো এটিতে হামলা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে পারে। কারণ সেখানে কোনো পরিণতি পার্শ্ববর্তী চীনকে প্রভাবিত করতে পারে।

সিউলের ইওহা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লেইফ-এরিক ইজলি বলেছেন, ‘চীনের এত কাছে ঘাঁটি তৈরি করে, উত্তর কোরিয়া আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তাকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে।’

সিএসআইএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, ঘাঁটির নির্মাণ কাজ ২০০৪ সালে শুরু হয়েছিল এবং এটি ২০১৪ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে। তখন থেকে ঘাঁটিটি সুরক্ষিত এবং সক্রিয়ভাবে বিকশিত হচ্ছে - যা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার চলমান অগ্রগতির প্রতিফলন ঘটাতে পারে। ঘাঁটিতে কোন মডেলের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত আছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এটি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক-সক্ষম হাওয়াসং-১৫ বা হাওয়াসং -১৮ আইসিবিএমএস অথবা অন্য কোনো ধরনের আইসিবিএমএস দিয়ে সজ্জিত, যা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঘাঁটিতে ট্রান্সপোর্টার লঞ্চার বা মোবাইল লঞ্চার রয়েছে - যা দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছুড়তে সক্ষম। এছাড়া সঙ্কট বা যুদ্ধের সময় এই লঞ্চার এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ঘাঁটি থেকে দ্রুত সরানোও যাবে।

উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার কাছে ৪০ থেকে ৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। একই সঙ্গে অঞ্চলজুড়ে এবং সম্ভাব্যভাবে মার্কিন মূল ভূখণ্ডে সেগুলো পাঠানোর উপায়ও রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার বক্তব্য আরও তীব্র করেছেন, দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি সুসংগঠিত করার প্রতিশ্রুতি এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ধ্বংস করার জন্য এটি ব্যবহার করার হুমকি দিয়েছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top