রবিবার, ২রা নভেম্বর ২০২৫, ১৭ই কার্তিক ১৪৩২


আলু রপ্তানির খেলায় ১০ কাস্টমস কর্মকর্তা, প্রণোদনার ৭.৫৪ কোটি টাকা হাওয়া


প্রকাশিত:
১ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:১১

আপডেট:
২ নভেম্বর ২০২৫ ০৪:৪২

ফাইল ছবি

আলু রপ্তানি দেখিয়ে সরকারের নগদ প্রণোদনার সাড়ে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল ধরা পড়েছে। অ্যাসিকিউডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমকে ব্যবহার করে কাগুজে প্রতিষ্ঠান অন্তরা কর্পোরেশনের অনুকূলে ৯৬টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রণোদনার অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। যেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে চট্টগ্রামের ১০ কাস্টমস কর্মকর্তা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে অভিযোগে সত্যতা পাওয়ার পর বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ১০ কাস্টমস কর্মকর্তা ও ৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। গত ৩০ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাসুদেব পাল, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, দিদারুন নবী, সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রনি বড়ুয়া ও মো. আরিফুর রহমান, বর্তমান রাজস্ব কর্মকর্তা ফারহানা আকরাম ও মো. মাহবুবুর রহমান।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন অন্তরা করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. মুশতাক খান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এ. অ্যান্ড জে. ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অংশীদার মো. আবদুল জলিল আকনমো. আলতাফ হোসেন, মেসার্স প্যান বেঙ্গল এজেন্সির মো. সেলিম, এবং জিআর ট্রেডিং করপোরেশন সিঅ্যান্ডএফ লিমিটেডের মো. আব্দুল রহিম

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অন্তরা কর্পোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দাখিলকৃত মোট ৯৬টি বিল অব এক্সপোর্টের ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে সরকার ঘোষিত নগদ প্রণোদনার টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন আসামিরা। ওই প্রতিষ্ঠানটি “তাজা আলু” রপ্তানির নাম করে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং করপোরেশন সিএন্ডএফ লিমিটেড এবং প্যান বেঙ্গল এজেন্সিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬ বছরের বিভিন্ন সময়ে কাস্টমস বিভাগের অ্যাসিকিউডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করে। উক্ত বিল অব এক্সপোর্টের পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে সরকার প্রদত্ত ২০ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রামের অফ-ডক কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো রপ্তানি পণ্য আনা হয়নি বা কোনো পণ্য গ্রহণ করেনি। যে ৯৬টি বিল অব এক্সপোর্টে দেখানো হয়েছে পুরোটাই কাগুজে। বাস্তবে কোনো পণ্য রপ্তানিই করা হয়নি। অ্যাসিকিউডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য ও নথি পর্যালোচনায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও তার সহযোগিদের প্রতারণা ও জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে দুদকের কাছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

আর্থিক লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ১১টি বিল অব এক্সপোর্ট সম্পন্ন হয় উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের দিলকুশা শাখায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের দিলকুশা শাখায় ৮৩টি বিল অব এক্সপোর্ট এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের এমসিবি দিলকুশা শাখায় ২টি বিল অব এক্সপোর্ট সম্পন্ন হয়রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অন্তরা কর্পোরেশন, সিএন্ডএফ প্রতিনিধিকাস্টমসের কতিপয় কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করেছে। তারা জাহাজীকরণ রেকর্ড, শিপিং বিল, ক্রেডিট রেটিং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সার্টিফিকেটসহ নানা ভুয়া নথি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করেছে। যার মাধ্যমে ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ৬৫১ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন আসামিরা।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা অনুযায়ী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর সংশ্লিষ্ট ধারায়ও মামলা দায়ের হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top