গ্রেপ্তার এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছিল শুটার বাপ্পি
প্রকাশিত:
২৯ জুন ২০২৫ ১৮:০৬
আপডেট:
২৯ জুন ২০২৫ ২২:৪৮

রাজধানীর ফকিরাপুলে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী বাপ্পি ওরফে মো. আলী ওরফে ফিরোজ আলম ওরফে আহসানুল হক। যশোর সীমান্ত দিয়ে পালাতে গিয়ে আশ্রয় নেন ঘোপ নওয়াপাড়া এলাকার এক সহযোগীর শ্বশুরবাড়িতে। ডিবি পুলিশ সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ওই বাসা ঘিরে ফেলে।
ডিবির জালে ধরা পড়ার আশঙ্কায় বাপ্পি অভিনব কৌশল নেয়। সে বাসার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস ছেড়ে দিয়ে পুলিশকে জিম্মি করার চেষ্টা করে। হুমকি দেয়, যদি তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তিনি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটাবেন। এতে বাসার শিশু ও নারীদের প্রাণহানি ঘটতে পারে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের লালবাগ বিভাগের একটি দল।
শুক্রবার (২৭ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে যশোর জেলা ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে ঘোপ নওয়াপাড়া এলাকা থেকে বাপ্পিসহ তার সহযোগী আবু খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে বোমা রিপন এবং মো. কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে পৃথক অভিযানে তাদের কাছ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি ম্যাগাজিন এবং দেড় শতাধিক গুলি উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২৯ জুন) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
নাসিরুল ইসলাম বলেন, গত ১৮ জুন রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর ফকিরাপুলের ডিআইটি এক্সটেনশন রোডে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ইয়াবাসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৯ জুন রাতে পল্টনে একটি সিলভার রঙের প্রাইভেটকার থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। তখন গাড়ি থেকে নেমে শীর্ষ সন্ত্রাসী বাপ্পি ডিবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। পরে গাড়িতে থাকা অন্যদের আটক করে ৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর বাপ্পিকে গ্রেপ্তারে ঢাকাসহ বরিশাল, সাতক্ষীরা ও যশোরে একাধিক অভিযান চালায় ডিবি।
পরে যশোরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে নজরুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থান নেওয়া বাপ্পির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশ বাসাটি ঘিরে ফেলে। গ্যাস বিস্ফোরণের হুমকির মুখেও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।
পরদিন শনিবার (২৮ জুন) বাপ্পির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর ডেমরা এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও দুটি বিদেশি পিস্তল, চারটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিনসহ মোট ১৫১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি জানায়, বাপ্পির গ্রুপে অন্তত ২৫ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০১০ সাল থেকে মাদক কারবারে যুক্ত বাপ্পি
বাপ্পি ২০১০ সাল থেকে মাদক ব্যবসায় সক্রিয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ অন্তত ১১টি মামলা রয়েছে। তার গ্রুপের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পি অস্ত্র সংগ্রহের উৎস সম্পর্কে বেশ কিছু নাম জানিয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি কাজ করছে।
সদস্যদের ‘সালামি’ হিসেবে দেয় ৭ লাখ টাকা
ডিবি জানিয়েছে, গত কোরবানির ঈদে বাপ্পি তার চক্রের সদস্যদের মধ্যে সাত লাখ টাকার ‘সালামি’ বিতরণ করে। এ সংক্রান্ত একটি তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে।
জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অস্ত্র মজুদ
নাসিরুল ইসলাম জানান, বাপ্পি আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বজায় রাখতে অস্ত্র সংগ্রহ করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো বেশ দামি। মাদক ব্যবসার আড়ালে সে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। হাতিরঝিল, ধানমণ্ডি ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার হত্যাকাণ্ড বা গুলির ঘটনায় এদের সম্পৃক্ততা আছে বলে প্রমাণ মিলেছে। যদিও এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: