শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবেঃ প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত:
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:৩২

আপডেট:
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:২৩

 ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড মহামারী মোকাবিলায় নিজেদের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘একটি সংকটপূর্ণ সন্ধিক্ষণ: আন্তঃসংযুক্ত প্রতিকূলতাগুলোর রূপান্তরমূলক সমাধান’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাত, কোভিড-১৯ মহামারীর মতো একাধিক জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় জর্জরিত পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই গ্রহ করে তোলার ঐক্যবদ্ধ আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারীর ভয়াবহ প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরু হওয়ায় বিশ্ব নতুন করে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, জ্বালানি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এ সংকটময় সময়ে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি পারস্পরিক সংহতির প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। এ সংকট নিরসনে জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধ বা একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা কখনো কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতিসংঘে দেওয়া প্রথম বাংলা ভাষণের বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি হলো বিশ্বের সব নারী-পুরুষের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তব প্রতিরূপ।’

কোভিড মহামারী মোকাবিলায় বাংলাদেশ মূলত তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রেখে কৌশল নির্ধারণ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামারীর বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, অর্থনীতি সুরক্ষিত রাখতে প্রণোদনা এবং জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। এসব উদ্যোগ মহামারীজনিত মৃত্যু কমানোর পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সাহায্য করেছে। এ ছাড়া টিকা সরবরাহের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এর কোভ্যাক্স ব্যবস্থা এবং সহযোগী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল পাঁচটি দেশের অন্যতম আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক এক পাঁচ শতাংশ। এর আগে, টানা তিন বছর ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েচে।’ মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক নয় চার শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং জ্বালানি, খাদ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কারণে আমাদের মতো অর্থনীতি মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছি।’ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু বদ্বীপে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি আখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর ভাঙার একটি দুষ্টচক্র আমরা অতীতে দেখেছি। আমাদের এখনই এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’ অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং জাতিসংঘসহ অন্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরও দুরূহ করে তুলেছে।’ এ বিষয়ে জাতিসংঘের আরও কার্যকর ভূমিকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। মানবপাচার ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে। এ সংকট প্রলম্বিত হতে থাকলে তা এ উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজের ১৮ স্বজন হারানোর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও তার বোন সেদিন জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের ত্রিশ লাখ মানুষ হত্যা করেছে বলে জানিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে যুদ্ধ বন্ধের জোরালো দাবি জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আসুন, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা একটি উত্তম ভবিষ্যৎ তৈরির পথে এগিয়ে যাই।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top