ঈদ নেই শেখ পরিবারে, পালিয়ে যাওয়া অন্য নেতারা ফুরফুরে
প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২৫ ১৫:৩০
আপডেট:
২ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৪০

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে ঈদ করেছেন তার কোনো তথ্য এখনও মেলেনি। শেখ পরিবারের অন্য সদস্যদের ঈদের খোঁজও এখনো পাওয়া যায়নি। গত ১৬ বছর ঈদের সময় শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের জীবিত সদস্যরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সময় পার করলেও এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।
এদিকে ভোটারবিহীন, একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে টানা চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার আগে এবং পরে গোপনে দেশ ছেড়েছেন। এদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক উন্নত দেশে অবস্থান করছেন। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসছেন। কারও কারও পরিবার এসব দেশে থাকায় তারা আছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
যদিও দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ পরিবার, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের যারা বিদেশে আছেন তারা স্বস্তিতে থাকলেও গ্রেফতার প্রভাবশালী নেতারা অনেকের ঈদ কেটেছে কারাগারে। আর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হয়ে পড়ছেন একেবারে ছন্নছাড়া। এলাকায় ফিরতে গিয়ে অনেকে জনরোষের মুখেও পড়েছেন।
তৃনমূলের অনেক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের কষ্টের কথা তুলে ধরে ঈদের আগে পরে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন। যেখানে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ত্যাগের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ তুলছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যারা বিদেশে আছেন তারা রাজকীয় ঈদ উদযাপন করেছেন এমন ছবিও পোস্ট করছেন ফেসবুকে। ফেসবুকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের ঈদ উদযাপনের ছবি দেখা গেছে।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ উদযাপন করছেন।
জানা গেছে, দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ঈদ পালন করছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও ভারতে আছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব ববিও ভারতে আছেন এমন গুঞ্জন আছে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। আর ছোট বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে আছেন। রেহানা কন্যা টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকও যুক্তরাজ্যে আছেন।
বিদেশে ঈদ করার গুঞ্জন আছে যে নেতাদের
৫ আগস্টের পর থেকে প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগেই দেশ ছেড়েছেন। সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথ বিদেশে আছেন বলে গুঞ্জন আছে। এদের কয়েকজনকে বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও সামনে আসতে দেখা গেছে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের ঈদ কেটেছে পরবাসে।
এ নিয়ে বিদেশে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘পৃথিবীর যে যেই দেশে আছে, সবাই অসামান্য নির্যাতন নিপীড়নের মধ্যে আছে। আজ আওয়ামী লীগ নাই, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কোনো ঈদ আনন্দ নেই। শেখ হাসিনা নেই, দেশের মানুষের মনে শান্তি নেই।’
কারাগারে কাটলো যে নেতাদের
সাবেক একাধিক মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা গত ৫ আগস্টের পরে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। পদ-পদবী ছাড়া এসব নেতাদের ঈদ কেটেছে বিভিন্ন কারাগারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শাজাহান খান, কাজী জাফরউল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথিত ছোটভাই সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও কারাগারে ঈদ করেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: