ছাত্রদের কাজ ক্যাম্পাসে, মন্ত্রণালয়ে নয় : রিজভী
প্রকাশিত:
২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৫
আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০২:২০
ছাত্রদের কাজ ক্যাম্পাসে, মন্ত্রণালয়ে নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছাত্র সংগঠনের কমিটি দেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সমাজের কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণি ছাত্রদের বিপথে পরিচালিত করছে, প্রলোভনে ফেলছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি, মুক্তি কতদূর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা শুনেছি প্রধান উপদেষ্টার সব মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেছে। উনিও শেখ হাসিনার ঈর্ষা, বিদ্বেষ এবং আক্রোশের শিকার হয়েছেন। আমরাও আন্দোলন সংগ্রামে থেকেছি, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি। দুই-একজন উপদেষ্টাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাদের মামলা যদি প্রত্যাহার হয়ে থাকে তাহলে এই লাখ লাখ মানুষেরগুলো কেন হচ্ছে না? অতি দ্রুত এই মামলাগুলো নিষ্পত্তির আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মাদক সম্রাজ্ঞীদের এমপি বানাতেন। গডফাদার ও মাদক কারবারিই ছিলেন হাসিনার কাছে বেশি সম্মানিত। আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী এস আলম, সালমান এফ রহমানসহ যারা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ তাদের টাকা পাচারের গল্প সিন্দাবাদের গল্পকে হার মানিয়েছে। নতুন রূপ কথার গল্প বাংলাদেশের মানুষ শুনেছে। গল্পটি রূপ কথার মতো হলেও এটি অত্যন্ত সত্য ও বাস্তব ঘটনা।
যেখানে আমেরিকানরা ফ্ল্যাট কিনতে সাহস পায় না সেখানে শেখ হাসিনার এমপি-মন্ত্রীরা ফ্ল্যাট কিনেছে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ পরিবারের টিউলিপ সিদ্দিকও এখান থেকে মুক্ত নয়, তিনি আবার লন্ডনের এমপি। শেখ হাসিনা তো নিজেই গর্ব করে বলতেন, তার পিয়ন নাকি বাড়িতে হেলিকপ্টার ছাড়া যায় না, সে নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। তার ঘনিষ্ঠ এস আলম তার বাড়ির কাজের লোককে দিয়ে একটি ব্যাংকের শাখা থেকে ২ হাজার কোটির বেশি টাকা লোন তুলেছেন। শেখ হাসিনা দেশ থেকে জনগণের টাকা লুট করে পুঞ্জীভূত করে পাচার করেছেন। কিছু টাকা দেশে আছে, যেটি বিভিন্ন অপকর্ম করতে ব্যবহার হচ্ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি।
রিজভী বলেন, পয়লা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা করতে গিয়ে যে প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, আন্দোলনের সেই ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি ব্যবহারের কারণে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের গ্রামের বাড়ি আগুনে ভস্মীভূত করে দেওয়া হয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদ তার অধঃপতনের পরও পাচার করা টাকার জোরে যেমন হুমকি দিচ্ছে তেমনি নানাবিধ কাজ করে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পরও তার পাচার করা টাকার যে জোর, এ জোরের বলে যেমন হুমকি দিচ্ছে তেমনি নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৬০ লাখ মামলা দিয়েছে এই কারণে যে তিনি তার লোক দিয়ে ব্যাংক দখল করবে আর কেউ যাতে এর প্রতিবাদ না করতে পারে। তার জন্য এই মিথ্যা মামলাগুলো দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি নেতাকর্মীদের খুন করেছে, গুম করেছে। তার ফ্যাসিবাদের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে রাখার জন্য এগুলো করেছে। জুলুমের এক বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মোটামুটি আট মাস হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা যে নির্বাচনকে কলঙ্কিত করে অদৃশ্য করার চেষ্টা করেছে সেই জায়গা থেকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করবেন, ড. ইউনূসের কাছে এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে কেন মানুষের হৃদয়কে দোলাচ্ছেন? পেন্ডুলামের মধ্যে ডিসেম্বর না জুন-এর মধ্যে দোল খাচ্ছে কেন? এটা স্পষ্ট করেন।
তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের নামে ৬০ লাখ মামলা, আমি জানি না এ মামলা প্রত্যাহার হয়েছে কি না। প্রায়ই উকিল ফোন দেয় দেখা করার জন্য। আমাদেরকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কোর্টের বারান্দায় লেফট-রাইট করতে হয়েছে। যত ধরনের অপমান আমাদেরকে করেছে। আমরা খুন করে মারামারি করি নাই যে আমাদের নামে মামলা হবে, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনার জজ-ম্যাজিস্ট্রেটরা আমাদের মিথ্যা মামলায় বিভিন্নভাবে অত্যাচার অপমান করেছে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ, বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন, ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: