শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


যে কারণে বিসিবি সভাপতি হতে পারছেন না সাকিব-মাশরাফি


প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২৪ ১২:৫৮

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ১৩:৪৫

ফাইল ছবি

নির্বাচন আর মন্ত্রিত্বের প্রশ্ন শেষ। এবার আলোচনার টেবিলে বড় প্রশ্ন, বিসিবি সভাপতির পদ নিয়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার চারদিন পরেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এরপরেই বড় প্রশ্ন, ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব কি চালিয়ে যাবেন পাপন। নাকি তার বদলে আসবেন নতুন কোনো মুখ।

বিশেষ করে মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং সাকিব আল হাসানকে এই পদে দেখতে আগ্রহী অনেকেই। তবে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হওয়ার প্রক্রিয়া বিবেচনা করলে কাজটা খুব একটা সহজ না তাদের দুজনের জন্য।

ফেডারেশন সভাপতি পদ নির্ধারিত হয় যেভাবে

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ ক্রীড়া ফেডারেশন চলে আসছিল অ্যাডহক ভিত্তিতে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ক্রীড়াঙ্গনের ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়। দুই বছর পর ১৯৯৮ সাল থেকে ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচন হয়ে আসছে।

শুরুর দিকে অন্য সকল ফেডারেশনের মতো ফুটবল, ক্রিকেটেও সভাপতি পদ সরকার কর্তৃক মনোনীত ছিল। বাকি পদ ছিল নির্বাচিত। ফিফার বাধ্যবাধকতার কারণে বাফুফে ২০০৩ সাল থেকে সভাপতি পদেরও নির্বাচন করে আসছে। ক্রিকেটে ২০১২ সাল পর্যন্ত সভাপতি সরকার কর্তৃক মনোনীত ছিল। নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন ২০১২ সালে। পরের বছর তিনি নির্বাচিত সভাপতি হন। ২০১৩ সালের পর ২০১৭ ও ২১ সালে টানা তিনবার নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পাপন।

বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হন যেভাবে

ফুটবল ফেডারেশনে সভাপতি পদে সরাসরি ভোট হয় এবং সকল কাউন্সিলর ওই পদে ভোট প্রদান করেন। বিসিবির সভাপতি নির্বাচনের পদ্ধতি ভিন্ন। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে অন্য পরিচালকদের মতোই পরিচালক হিসেবে আগে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। পরিচালক নির্বাচিত হয়ে আসার পর পরিচালকবৃন্দের মধ্যে একজন প্রস্তাব ও আরেকজনের সমর্থনের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়। ২০১৩, ১৭ ও ২১ তিন মেয়াদেই পরিচালকবৃন্দ নাজমুল হাসান পাপনের নামই সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব এবং সমর্থন দেওয়ায় তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। একাধিক নাম না আসায় আর এখানে ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি।

পরিচালক হওয়ার ধাপসমূহ

বিসিবির পরিচালক সংখ্যা ২৫। এই পরিচালকরা ক্লাব, জেলা-বিভাগ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং সাবেক খেলোয়াড়, সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয় কোটা থেকে নির্বাচিত হন। প্রিমিয়ার, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্লাব থেকে সবাই একজন করে কাউন্সিলরশিপ পান (আগে প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে দু’টি করে কাউন্সিলরশিপ ছিল)। এদের মধ্যে থেকে ১২ জন পরিচালক হিসেবে মনোনীত হন। দশের অধিক প্রার্থী হলে সেখানে এই ক্লাবগুলোর ভোটাররাই ভোট প্রদান করে নির্বাচিত করবেন। ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠক/পৃষ্ঠপোষক/সাবেক ক্রীড়াবিদ মূলত এই ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর হন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পরিচালক পদে।

দেশের সাতটি বিভাগে রয়েছে আলাদা আলাদা পরিচালক নির্বাচন ব্যবস্থা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে দু’টি এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেটে একটি করে পরিচালক পদ রয়েছে। স্ব স্ব বিভাগের পরিচালক প্রার্থীদের ওই বিভাগের ভোটাররাই শুধু ভোট প্রদান করবেন। প্রতিটি বিভাগে ভোট প্রদান করেন তাদের অর্ন্তগত জেলা ক্রীড়া সংস্থার মনোনীত কাউন্সিলররা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর সাধারণত সেই জেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা যে কেউ হতে পারেন, আবার এর বাইরেও হতে পারেন।

বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হন যেভাবে

আরেকটি ক্যাটাগরিতে মাত্র একটি পরিচালক পদ। সাবেক খেলোয়াড়, বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস সংস্থা থেকে একজন পরিচালক হতে পারেন। গত নির্বাচনে এই ক্যাটাগরিতে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পরবর্তীতে সুজন ওই পদে নির্বাচিত হন। তিন মেয়াদেই একই পদে নির্বাচন করছেন সুজন।

এই তিন ক্যাটাগরির বাইরে রয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটার পরিচালক। বর্তমান বোর্ডে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কোটায় পরিচালক। এই কোটায় কোনো নির্বাচন হয় না। এনএসসি যাদের মনোনয়ন দেবেন, সরাসরি নির্বাচিত হবেন তারা। এই কোটার আরও স্বাধীনতা রয়েছে— জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে ক্লাব, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে দু’জনকে এনএসসি কোটায় পরিচালক মনোনীত করতে পারে।

২০১৩ সালে নাজমুল হাসান পাপন এনএসসি কোটায় পরিচালক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে পরিচালকরা তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। গত দুই নির্বাচনে তিনি ঢাকা আবাহনীর কাউন্সিলর হিসেবে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তীতে একই প্রক্রিয়ায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন পাপন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর ও পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় রয়েছে। অনেক ক্রীড়া সংগঠক অন্য ফেডারেশনের কাউন্সিলর থাকেন। সেক্ষেত্রে বিসিবি ছাড়া অন্য আরেকটি ফেডারেশনের কাউন্সিলর থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ। যদি কারও তিনটি ফেডারেশনের কাউন্সিলরশিপ থাকে, তাহলে বিসিবির কাউন্সিলর হতে পারবেন না। আবার বিসিবি’র কোনো পরিচালক অন্য কোনো ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতেও থাকতে পারবেন না। তবে অন্য ফেডারেশনের সাধারণ পরিষদের সদস্য (কাউন্সিলর) হতে পারবেন।

বিসিবির পরিচালকদের ক্যাটাগরি ভিত্তিক বিন্যাস—

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ: জালাল ইউনুস, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি।

‘সি’ ক্যাটাগরি (সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থা): খালেদ মাহমুদ সুজন।

ক্লাব ক্যাটাগরি: নাজমুল হাসান পাপন, মাহবুব আনাম, এনায়েত হোসেন সিরাজ, মঞ্জুর কাদের, মঞ্জুরুল আলম, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, গাজী গোলাম মর্তুজা, নজীব আহমেদ, ওবেদ রশিদ নিজাম, সালাহউদ্দিন চৌধুরি, ইফতেখার রহমান মিঠু ও ফাহিম সিনহা।

জেলা-বিভাগ ক্যাটাগরি: নাইমুর রহমান দুর্জয়, তানভীর আহমেদ টিটো, কাজী ইনাম, শেখ সোহেল, আকরাম খান, আ জ ম নাসির, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, সাইফুল আলম স্বপন, আলমগীর খান আলো ও শফিউল আলম চৌধুরি নাদেল।

সাকিব-মাশরাফি কেনো পারছেন না?
বিসিবি সভাপতি হতে চাইলে উপরের এই পঁচিশ পদের যেকোনো একটিতে দেশের এই দুই ক্রিকেটারের নাম থাকতে হবে। নিজের জেলা বা ক্লাবের সঙ্গে এখনো যুক্ত হতে পারেননি সাকিব আল হাসান বা মাশরাফি বিন মর্তুজা। বিশেষ করে, দুজনেই এখনো ক্লাব পর্যায়ে খেলে থাকেন, সহসাই তাই তাদের পরিচালক পদে আসা সম্ভব না।

অন্যদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নেওয়ার কারণে সাবেক ক্রিকেটার হিসেবেও তাদের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব না। অন্যদিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে তাদের বিবেচনা করা হবে কিনা, তা নিয়েও আছে বড় প্রশ্ন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top