বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪, ১৮ই আষাঢ় ১৪৩১


সামুদ্রিক বর্জ্য দূর করা হয় যেভাবে


প্রকাশিত:
৫ জুন ২০২৪ ১৭:০৩

আপডেট:
৫ জুন ২০২৪ ১৭:১৯

ছবি- সংগৃহীত

প্রায় এক দশক ধরে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর উপায় নিয়ে কাজ করছেন বোয়ান স্ল্যাট নামের এক ডাচ উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘ওশান ক্লিনআপ’ নামে অলাভজনক পরিবেশ সংগঠন বিশ্বের বিভিন্ন নদী ও সমুদ্র থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বোয়ান স্ল্যাট বলেন, যা ধারণা করেছিলাম, এটা তার চেয়ে অনেক কঠিন। কাজের পরিধি আসলে অনেক বড়। বিশ্বের প্রায় এক হাজার নদী ও পাঁচ মহাসাগরের বর্জ্যের স্তূপ ঠেকাতে হবে। সমস্যাটি বুঝতেই আমার প্রথম কয়েক বছর লেগে গেছে।

সমুদ্রে জমে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় জঞ্জালটি পরিচিত ‘দ্য গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’ নামে। এটি রয়েছে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে। এ জঞ্জালের মধ্যে রয়েছে বড় মাছ ধরার জাল থেকে শুরু করে মাইক্রোপ্লাস্টিকও। এটাকেই মূল টার্গেট বানিয়েছে ‘ওশান ক্লিনআপ’ দল।

প্লাস্টিক ধরার জাল!
বর্জ্য আটকাতে ওশান ক্লিনআপ দীর্ঘ ইউ-আকৃতির এক কাঠামো ব্যবহার করে, যা দেখতে অনেকটা মাছ ধরার জালের মতো। দুপাশে দুটি নৌকার মাধ্যমে বিভিন্ন বর্জ্যের স্তূপ টানা হয়। জলজ প্রাণীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ধীরে ধীরে ওই জাল টানা হয়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত (এআই) ক্যামেরার মাধ্যমে সামুদ্রিক পৃষ্ঠে ক্রমাগত স্ক্যান করে সেটি আগে থেকে করে রাখা কম্পিউটার মডেলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে দলটি। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের কোন কোন এলাকা টার্গেট করতে হবে, তা ঠিক করা অনেকটাই সহজ হয়।

বোয়ান স্ল্যাট বলেন, আপনি গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচের দিকে তাকালে লক্ষ্য করবেন, এতে এমন কয়েকটি জায়গা রয়েছে, যেখানে প্লাস্টিকের ঘনত্ব অনেক বেশি। আবার কিছু জায়গা একেবারেই খালি। আমরা যদি এই হটস্পটগুলো ক্রমাগত পরিষ্কার করি, তাহলে অনেক বেশি প্রভাব রাখা সম্ভব হবে।

আটশ মিটার এলাকাজুড়ে প্লাস্টিক আটকানোর ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে সমুদ্র থেকে পর্যায়ক্রমে প্লাস্টিক তুলে এনে রিসাইকেল করা হয়।

বোয়ান বলেন, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক পরিষ্কার হয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক স্তূপে থাকা এক লাখ টন আবর্জনার কেবল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
ওশান ক্লিনআপের আশা, বছরের শেষ নাগাদ চলতি ব্যবস্থা ব্যবহার করে বর্জ্যের স্তূপ থেকে এক শতাংশ তুলে আনা যাবে। তবে, তুলনামূলক দ্রুত বর্জ্য পরিষ্কারের স্বার্থে দলটির কার্যক্রম বাড়ানোর কথা উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।

‘সিস্টেম ৩’ নামে নতুন ব্যবস্থা তৈরি করছে উদ্যোক্তা দলটি। দুই দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ বিশাল এই প্রতিবন্ধক ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা গ্রীষ্মে। ওশান ক্লিনআপের অনুমান বলছে, এমন ১০টি বিশালাকারের সিস্টেম চালু করলে এই দশকের শেষে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।

স্রোতের শুরু যেখানে
২০২১ সালে করা ওশান ক্লিনআপের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণের ৮০ শতাংশেরই উৎস বিশ্বের প্রায় এক হাজার নদী। নদীগুলো মূলত ভূমি থেকে সমুদ্রে আবর্জনা বহন করে। যখন ঝড়-বৃষ্টি হয়, তখন প্লাস্টিকগুলো রাস্তা থেকে খাঁড়িতে, খাঁড়ি থেকে নদীতে ও শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে ভেসে যায়।

বিষাক্ত পলিথিনে বিষিয়ে উঠছে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ
সমুদ্রে পৌঁছানোর আগে, নদী থেকে বর্জ্য ধরার জন্য ‘ইনটারসেপ্টর’ নামের ব্যবস্থা ব্যবহার করছে ওশান ক্লিনআপ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চালিত এ প্রযুক্তি নদীর প্রস্থ, গভীরতা, প্রবাহের গতি ও আবর্জনার ধরনের মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সামুদ্রিক দূষণ সমাধান নিঃসন্দেহে কঠিন। প্রথমত এটি প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধের ওপর নির্ভর করে। তবু এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চাশা রয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top