সাবেক অর্থমন্ত্রী এখন উবার চালক
 প্রকাশিত: 
 ২১ মার্চ ২০২২ ২২:১০
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৭
 
                                গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে তালেবান। তালেবান যোদ্ধাদের কাবুলে অগ্রসর হতে দেখে এরও কয়েক দিন আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। সঙ্গে নিয়ে যান রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ১৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। কিন্তু গনি সরকারেরই অর্থমন্ত্রী খালিদ পাইয়েন্দা তা করেননি। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো খালিদ ছয় মাস ধরে ওয়াশিংটন ডিসিতে উবার চালাচ্ছেন।
তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এক সপ্তাহ আগে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন খালিদ পাইয়েন্দা। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির কারণে পদত্যাগ করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট গনির নির্দেশে গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কায় দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট ৪০ বছর বয়সী খালিদ পাইয়েন্দাকে নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, গনি সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকার সময় আফগানিস্তানকে সহায়তা হিসেবে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৬০০ কোটি ডলারের একটি তহবিল দেখভালের দায়িত্ব ছিল তাঁর। অথচ মাত্র ১৫০ ডলার আয় করতে গত সপ্তাহে এক রাতে ছয় ঘণ্টা উবার চালান খালিদ পাইয়েন্দা। তিনি বলেন, ‘আগামী ২ দিনে যদি ৫০ ট্রিপ দিতে পারি, তাহলে ৯৫ ডলার বোনাস পাব।’
কাবুল থেকে ওয়াশিংটনে পাড়ি জমানোর মাধ্যমে কীভাবে সেখানে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, সেই গল্প এক যাত্রীকে বলেন খালিদ পাইয়েন্দা। তিনি বলেন, পরিবারকে সাহায্য করার এ সুযোগ পেয়ে তিনি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তবে একই সঙ্গে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমার কোনো ঠিকানা নেই। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে, এখন আমি এখানকার কেউ নই, আবার সেখানকারও কেউ নই। একটা নিদারুণ শূন্যতাবোধ কাজ করে।’
২০২০ সালের শেষ দিকে কাবুলের এক জীর্ণ হাসপাতালে খালিদ পাইয়েন্দার মা কোভিডে সংক্রমিত হয়ে মারা যান। এর কিছুদিন পর আফগানিস্তানের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। তবে ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব না নিলে বরং ভালো করতেন তিনি। খালিদ পাইয়েন্দা বলেন, ‘তখন আমি অনেক কদর্য বিষয় ঘটতে দেখি এবং আমরা ব্যর্থ হই। সেই ব্যর্থতার আমিও অংশীদার। মানুষের অসহায়ত্ব দেখে যখন মনে হয় আমিও দায়ী, তখন খুবই খারাপ লাগে।’
আফগানিস্তানে সংস্কার আনার জন্য দেশটির মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার ঘাটতি দেখেন খালিদ পাইয়েন্দা। তবে একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরুর সময় যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন ইউক্রেনের জন্য যা করা হচ্ছে, সেটা বাহবা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু আফগান ও ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আমার সামান্য হিংসা হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনাদের সঙ্গে দুই দশক ধরে যুদ্ধ করেছে তালেবান। এতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনীতি ছিল নাজুক। আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের রিজার্ভ জব্দ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির এ সংকট আরও বাড়ে। শুধু দিনমজুর বা সাধারণ মানুষ নন, সচ্ছল অনেক পরিবারও দুই বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছে। অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ।
ডিএম/তাজা/২০২২

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: