মনুষ্য বসতির নতুন দিগন্ত 'মঙ্গল'
পৃথিবীর বাইরে আরেক পৃথিবী
 প্রকাশিত: 
 ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:২৫
 আপডেট:
 ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৩৬
 
                                মহাবিশ্বের গোলক ধাঁধার জট খোলার প্রয়াস মানুষের দীর্ঘদিনের। পৃথিবীর বাইরে আরেক পৃথিবী খোঁজার নেশাও সেই থেকেই। মানুষের মজ্জায় মিশে থাকা জন্মগত এই অনুসন্ধিৎসা থেকেই শুরু মঙ্গলের সন্ধান। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৪৭ কোটি মাইল দূরের এই গ্রহে পৃথিবীর প্রথম চোখ পড়ে ১৯৬০ সালে।
তারপর থেকেই চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা-অভিযান। ব্যর্থতা-সফলতা আর নিরলস প্রচেষ্টায় আজ মঙ্গলের মাটিতে পৃথিবীর প্রতিনিধি। খুঁজছে প্রাণের অস্তিত্ব। স্বপ্ন দেখছে নতুন বসতি স্থাপনের। কিন্তু বিজ্ঞানীর কীভাবে বাসযোগ্য করে তুলবেন সৌরজগতের এ নতুন গ্রহ?
মঙ্গলের বর্তমান যে অবস্থা, সেখানে মাত্র ৬৮ দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারবেনা মানুষ? নানামুখী এসব আলোচনা-সমালোচনা, জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে নাসার এবারের এ সফল অভিযানে।
সম্প্রতি মঙ্গলে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অভিযান আরও সফল হয়েছে। লালগ্রহের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করেছে এর নতুন মহাকাশযান ‘পারসিভিয়ারেন্স রোভার’। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতের ঠিক পরই অবতরণের প্রস্তুতি শুরু করে এটা। রাত ২ টা ৫৫ মিনিট নাগাদ মঙ্গলের ‘জেজেরো ক্রেটার’ এলাকায় অবতরণ করে যানটি। এরপরেই বিশ্ব সাক্ষী রইল রহস্যে মোড়া লালগ্রহের প্রথম ছবির। মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না আগামী দুই বছর ধরে তা খতিয়ে দেখবে সে।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৯ বছর ধরে মঙ্গলের মাটিতে থাকবে ‘পারসিভিয়ারেন্স’। সেখানে ৩০ ধরনের পাথর এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করবে সে। এরপর ২০৩০ সাল নাগাদ ফের পৃথিবীতে ফিরে আসবে। নাসার বিজ্ঞানীদের আশা, রোভার ফিরে এলে খুলে যেতে পারে মনুষ্য বসতির আরেক নতুন দিগন্ত।
লালগ্রহে যেতে ওয়ান-ওয়ে টিকেট বিক্রি: 
আগামী বছরগুলোতে লালগ্রহে মানুষ পাঠানো ও বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে নাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে সবার আগে ২০২৩ সাল নাগাদ মঙ্গল অভিযানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি ‘মার্স ওয়ান’। সেই লক্ষ্যে টিকেট বিক্রি শুরু করে তারা।
এ নিয়ে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আবেদন করেছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুসারে, আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে প্রথম ৪০ জনকে নির্বাচন করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে চূড়ান্তভাবে চারজনকে বাছাই করা হবে।
এরপর ২০২৩ সালে চার নভোচারীর প্রথম দলটি মঙ্গলে যাবে। এরপর প্রতি দুই বছর পরপর তাদের সঙ্গে যোগ দেবে নতুন দল।
দুই-তিন মাসেই পৌঁছে দেবে যে নভোযান: 
দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ‘লালগ্রহে’ পৌঁছানো বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এখনকার রকেটচালিত যানে যেতে সময় লাগবে নয় মাস। মঙ্গলে নাসা যে মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান পাঠিয়েছে সেগুলো পৌঁছতে ১২৮ দিন থেকে ৩৩৩ দিন সময় নিয়েছে। একজন অভিজ্ঞ নভোচারীর জন্যও হয়তো সেটা অনেক দীর্ঘ সময়।
প্রধানত এ কারণেই মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানোর কোনো প্রকল্পই সেভাবে এগোতে পারছে না। তাই নাসাসহ নানা প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন এমন একটা প্রযুক্তি বের করতে, যাতে অনেক কম সময়ে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছানো যাবে।
এর লক্ষ্য হলো পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যাওয়ার সময়টা তিন মাস বা তার নিচে নামিয়ে আনা। মার্কিন রকেট নির্মাণ ও পরিচালনাকারী একটি প্রতিষ্ঠান এবার বিশেষ এক ধরনের ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করেছে। এতে চড়ে মানুষ মাত্র ৩৯ দিনেই মঙ্গলপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারবে বলে গবেষকরা দাবি করছেন।
সেকেন্ডে ১১ কিমি. গতি সামলাতে হবে মানুষকে: 
হয়তো কেউ মঙ্গলে যাওয়ার টিকিট পেয়ে গেল এবং এক সময় নভোযানে চড়ে লালগ্রহে যাওয়ার কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটিও চলে আসল। তবে এক্ষেত্রে তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করার ধকল সহ্য করা। মধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরোতে ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিমি. গতিতে ছুটবে রকেট, যা সেকেন্ডে প্রায় ১১ কিমি.। এর মানে ওই ব্যক্তিকে এই অতি উচ্চ গতি সহ্য করার যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
মঙ্গল হবে ধনীদের গ্রহ: 
গবেষণা চলছে জোর কদমে। শুরু হয়েছে টিকিটের বেচাকেনা। মানুষ হয়তো একদিন মঙ্গলে বসবাস করতে সক্ষম হবে। হয়তো পৃথিবীর মতো সেখানেও বসতি গড়বে। কিন্তু অল্প কিছু মানুষই সেই সুযোগ পাবে। আর অতি ধনীরাই হবে সেই ভাগ্যবান। মঙ্গলকে তাই ‘ধনীদের গ্রহ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
দৃষ্টান্তস্বরূপ, ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলগ্রহে একটি পরিপূর্ণ শহর স্থাপনের পরিকল্পনা করেছেন রকেট নির্মাণ কোম্পানি স্পেসএক্স’র স্বত্বাধিকারী ইলন মাস্ক। এই মূহূর্তে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী তিনিই। সম্প্রতি তার নেট আর্থিক সম্পদ ১৮ হাজার পাঁচশ কোটি ডলারের ঘর পার করেছে।
মঙ্গলগ্রহে কদিন বাঁচবে মানুষ: 
আগামী এক দশকের মধ্যেই মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় চলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে গেলে মানুষ সর্বোচ্চ কতদিন টিকতে পারবে? মার্কিন গবেষকেরা হিসাব করে দেখেছেন, মঙ্গলগ্রহের প্রতিকূল পরিবেশ ও সেখানে তৈরি করা অবকাঠামো বিবেচনায় নিলেও মাত্র ৬৮ দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে মানুষকে। ২০১৪ সালের এক গবেষণায় এই সতর্কতা দিয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকেরা।

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: