বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরে কাটা হয়েছে ৫ হাজার গাছ, কাটা পড়ছে আরও ৪ হাজার


প্রকাশিত:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪০

আপডেট:
৯ মে ২০২৪ ২২:২১

ছবি- সংগৃহীত

তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস করছে সারাদেশ। প্রকৃতিকে ঠান্ডা করতে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার গাছ কেটে ফেলছে বন বিভাগ।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার ৪ হাজার গাছ কাটার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। দাবদাহের এই দুঃসময়ে গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দরপত্র পাওয়া দিনাজপুরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা কিছু শ্রমিক রাস্তার গাছ কাটছেন। এক সপ্তাহ আগে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী ৪ হাজার গাছ কাটবেন তারা। গত এক সপ্তাহে ৩ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা।

গেল বছরেও এই উপজেলার বড়বাড়ী, আমজানখোর ও চাড়োল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তার ৫ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। পরে ৮ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে নতুন গাছ লাগালেও অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গাগুলোতে গাছ লাগানোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

জেলা বন বিভাগ বলছে, ৮ ইউনিয়নে রাস্তর দুই পাশে অবশিষ্ট থাকা গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য দরপত্র দিয়েছে বন বিভাগ। এর মধ্যে দুটো ইউনিয়নে গাছ কাটা শুরু হয়ে গেছে।

বন বিভাগের আহ্বান করা দরপত্র অনুযায়ী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের লোহাগাড়া থেকে তিলকরা সরাকন্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও ধনতলা ইউনিয়নের পাঁচপীর থেকে ফুটানী হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, তিলময় বাবুর বাড়ি থেকে এনামুল চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে বাহার জিলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও সিন্দুরপিন্ডি থেকে খোঁচাবাড়ি হয়ে তীরনই নদীর শেষ সীমানা এবং দলুয়া হয়ে পান্তা ভিটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ মোট ৩৭ কিলোমিটার জুড়ে রাস্তার পাশের বিশাল আকৃতির গাছগুলোর গায়ে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে।

মশালডাঙ্গী গ্রামের কৃষ্ণ রায় মাঠে কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষেরা বসে একটু বিশ্রাম নেয়। এ তীব্র দাবদাহের মধ্যেও এখন রাস্তার দুইপাশের বিশালাকৃতির গাছ খুঁজেই পাওয়া যায় না। যে কটা আছে সেগুলোও কেটে ফেললে এলাকাটা মরুভূমি হয়ে যাবে। তাই কয়েকটা মাস কোনো গাছ না কাটলে খুব উপকার হয়।

পথচারী আব্দুস সালাম বলেন, পরিবেশটা ঠান্ডা হলে গাছগুলো কাটুক তাতে আপত্তি নেই। এখন গাছগুলো কাটলে প্রচণ্ড রোদে মানুষসহ পশুপাখির জন্য পরিবেশ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।

স্কুলছাত্র আবু শামিম বলেন, গরমের কারণে আমাদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাড়ি থেকে স্কুল ৭ কিলোমিটার দূরে। রাস্তার দুপাশে গাছ থাকলে আরামে স্কুলে যাতায়াত করা যায়। এখন গাছগুলো কাটতে শুরু করেছে, স্কুল খুললে যেতে খুব কষ্ট হবে।

জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকলেও রংপুর আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, শুক্রবার ঠাকুরগাঁয়ে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমে উপজেলার বেশ কিছু স্থানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করেতে দেখা গেছে মুসল্লিদের। এ অবস্থায় গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার লোকজন।

সনগাও গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আমানুল্লাহ বলেন, রাস্তার পাশের গাছগুলো এই মুহূর্তে মানুষ ও পশু-পাখির জন্য খুব প্রয়োজন। অনেক পাখি গাছগুলোতে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়েছে।

পাড়িয়া ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, দরপত্র যখন হয়েছে ঠিকাদার গাছ কাটবেই। এতে বাঁধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে গ্রামবাসীর দাবি গরমের দিনগুলো পার করে কাটুক। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগকে প্রয়োজনে লিখিত আকারে জানাব আমরা।

ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের বন কর্মকর্তা শফিউল আলম মন্ডল বলেন, গাছগুলো কাটার উপযোগী এবং যারা লাগিয়েছেন তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় গাছগুলো কাটা বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদার ও বন বিভাগকে জানিয়েছি। দাবদাহ কমে গেলে দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদার কাটবেন।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। যেহেতু আপনি বলেছেন বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ৪ হাজার গাছ কেটে ফেলছে সেটা নিয়মকানুন মেনে কাটা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পরই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top