বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩২


মর্টার শেল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল গ্রাম, বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত


প্রকাশিত:
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৪০

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৭

ছবি সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এ সময় বিস্ফোরণের আওয়াজে ওই গ্রামের বেশ কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা।

সরেজমিনে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে আড়ালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বাড়িঘর। ওই গ্রামের টিভি-ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে। মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোনো জনমানবহীন স্থানে ওই মর্টার শিলটি নিষ্ক্রিয় করা হলে তাদের এতো ক্ষয়ক্ষতি হতো না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে কাজ শুরু করেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। রাত ৮টার দিকে মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতোটাই বেশি ছিল যাতে আড়ালিয়া গ্রামের বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে সেলিম, হারেস, রশিদ, রফিজ, লাকি বেগম. মইনউদ্দিন, সেলিম, আব্দুল বারেক বেপারী, ইয়াসিন, রেনু মিস্ত্রী, ফরিদ হোসেন, আব্দুল হান্নান, মানিক মিয়া, জলিল, মুক্তার হোসেন, আব্দুল গাফফার, সেলিম মিয়া, বারেকের বাড়িসহ গ্রামের অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওই গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে সেলিম বলেন, আমার দুটি বসতঘরের টিন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এছাড়া ঘরের ইলেকট্রিক সামগ্রী সব নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আব্দুল বারেক বেপারী বলেন, আমি আমার বাড়িতে ৪ তলা ভবন নির্মাণের কাজ করছি। বিস্ফোরণে আমার বিল্ডিংয়ের নিচ তলার দেয়াল ফেটে গেছে।

লাকি বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর। কিছুদিন আগে আমি টিন ও কাঠ দিয়ে ঘর তুলছি। বিস্ফোরণে আমার ঘরের সব নস্ট হয়ে গেছে। ঘরে থাকা টিভি ফ্রিজসহ আমার সব শেষ হইয়া গেছে।

মাফুল মিয়ার ছেলে জসিম বলেন, আমার বিল্ডিংয়ের দেয়াল ভেঙে আমার ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া মাফুজ ফকির, ইয়াসিন, মইনউদ্দিনের বাড়ির টিন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানি আব্দুর রশিদ বলেন, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল প্রায় ৩০০ মিটার দূরের। আমার দোকানের প্রায় সব কিছু উড়ে যায়। শুধু আমার নয়, আশপাশের অন্তত ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদ ও বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে। তীব্র শব্দে মারা গেছে গোয়ালে থাকা গরুর বাছুর।

ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তানিয়া আক্তার বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ঠিক ৭টা ৫৬ মিনিটে আমরা তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করি। প্রথমে বিষয়টিকে আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পড়ে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার পর স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েন পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যমকর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে স্থানীয় কয়েকজন।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করার সময় আশপাশের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্থদের সহয়তার ব্যাপারে বুধবার বিকেল ৩টার দিকে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে জরুরি সভা হবে। সভায় বসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন হানিফের কৃষি জমিতে মাটি কেটে আইল বানাতে গিয়ে একটি মর্টার শেল পাওয়া যায়। স্থানীয়রা এটিকে প্রথমে সীমানা পিলার মনে করলেও পরবর্তীতে পুলিশ জানায় এটি একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল। পরে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করার সময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন ওই গ্রামের লোকজন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top