নভেম্বর শেষ কিন্তু মেলেনি টাকা, আশায় প্রহর গুনছেন আমানতকারীরা
প্রকাশিত:
২ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০০
আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:৩৯
নভেম্বর শেষ হয়েছে। কিন্তু ছোট অঙ্কের আমানতকারীদের হাতে ফেরেনি প্রতিশ্রুত সেই টাকা। গভর্নরের ঘোষণার পরও টাকা না পেয়ে উদ্বেগে দিন কাটছে হাজারো গ্রাহকের। কেউ সকালে, কেউ আবার বিকেলে ব্যাংকের শাখায় ছুটে যাচ্ছেন— আজ টাকা মিলবে সেই আশায়। কিন্তু প্রতিদিনই একই হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। বন্ধ কাউন্টার, খালি লবি আর ব্যাংকারদের নিরুপায় মুখ— সব মিলিয়ে জমানো টাকার জন্য এখন প্রহর গোনা ছাড়া উপায় নেই সাধারণ মানুষের।
মতিঝিল, পল্টন, গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন শাখায় গিয়ে দেখা যায়, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করলেও একীভূত হওয়া অন্যান্য ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতে এখনো নেমে এসেছে অস্বাভাবিক নীরবতা। যেখানে একসময় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকত, সেখানে এখন কাউন্টার খা খা করছে— মানুষ নেই, পরিচিত কোলাহল নেই।
কয়েকজন শুধু ডিপিএস বা অন্যান্য জরুরি কাজে আসা-যাওয়া করছেন; কিন্তু উত্তোলন কার্যত বন্ধ। গ্রাহকদের একটাই প্রশ্ন, গভর্নর বলেছিলেন নভেম্বরে টাকা পা। কিন্তু নভেম্বর তো শেষ, জমানো টাকা পাব কবে?
বিভিন্ন শাখার ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রাহকেরা স্বেচ্ছায় আসা কমিয়ে দিয়েছেন। কারণ বারবার এসে টাকা না পেয়ে ফেরত যাওয়ার হতাশায় আছেন। সরকার ঘোষিত অর্থ ছাড় না হওয়া পর্যন্ত তারা গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারবেন না— এই বার্তা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট।
আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে রাজধানীর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তোপখানা রোড শাখায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো গ্রাহক নেই। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর একজন গ্রাহকের দেখা মিলল। তিনি জানালেন মাসিক ডিপিএসের টাকা জমা দিতে এসেছেন। এরপর আরও একজন গ্রাহক এলেন। তিনিও এসেছেন একই প্রয়োজনে।
জিজ্ঞেস করলে জোবায়ের নামের ওই গ্রাহক বলেন, আমার পাঁচ বছর মেয়াদি একটা ডিপিএস আছে। সেই ডিপিএসের টাকা জমা দিতে এসেছি। শুনেছি অনেকেই টাকা তুলে নিচ্ছে এই ব্যাংক থেকে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এই ব্যাংক না পারলেও সরকার টাকা ফেরত দেবে। কারণ, ইতোমধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। আগে বেসরকারি থাকলেও এখন এটি একটি সরকারি ব্যাংক। আমি টাকা পাব সেই বিশ্বাস থেকেই টাকা জমা দিচ্ছি। তা ছাড়া, এখন ডিপিএস ভেঙে ফেললে আমি ব্যাংক ঘোষিত প্যাকেজের কোনো সুবিধা পাব না। মুনাফা জলে যাবে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নয়া পল্টন শাখায় গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। কোনো গ্রাহক নেই। কর্মকর্তারা নিজেরা কাজ করছেন নিজেদের মতো।
এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়েও তেমন ভিড় দেখা যায়নি। এই শাখায় আগে সবসময় মানুষের ভিড় থাকত। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেউই টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না। কারণ হিসেবে বলছেন, উপর থেকে নিষেধ রয়েছে।
অপরদিকে গ্রাহকের আস্থা ফেরানোই সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রথম কাজ বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সরকারি মালিকানায় একটি ইসলামী ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করেছে, এটা জাতির কাছে সুসংবাদ। ব্যাংকটি সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে অনেকগুলো কারিগরি টিম কাজ করছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের প্রধান কাজ হবে আমানতকারীদের আস্থা ফেরানো। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক জাতির কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে।
গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া, আইন-কানুন পর্যালোচনা করা এবং ব্যাংকের ভিশন ও মিশন সম্পর্কে ধারণা নেওয়া বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য ছিল। একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা প্রধান চ্যালেঞ্জ, এরপর পাঁচটি ব্যাংকে আইনসম্মতভাবে একীভূত করার পদক্ষেপ নেব।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাইসেন্স ইস্যুর পর আজ থেকে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান নতুন এই চেয়ারম্যান।
প্রসঙ্গত, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করে গড়ে তোলা হয়েছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। নতুন ব্যাংকটির মোট পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা আর অন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা আসছে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে।
ইতোমধ্যে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ। যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট থেকে মূলধন হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ গতকাল সোমবার ব্যাংকটির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: