বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিভ্রান্তি


প্রকাশিত:
২০ মে ২০২১ ১৯:০৫

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ২০:৪৫

ফাইল ছবি

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থবির দেশের শিক্ষা খাত। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অন্য সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হলেও সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে খোলা হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত বছর এইচএসসিতে অটোপাস দেয়ার পর এবার আবার অনিশ্চয়তায় পড়েছে এই পাবলিক পরীক্ষা। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে আছে একই কারণে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষাও হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ২৩শে মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার কথা বলা হলেও ছুটির মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। ২৯শে মে’র পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এমন অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার পর প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। দেশে এখন ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মজুত টিকাও শেষ হয়ে এসেছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা কবে টিকা পাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা মিলছে না। এছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য এখন পর্যন্ত টিকার অনুমোদন মিলেনি দেশে।

মাঝে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ছিল ইতিবাচক। কিন্তু হঠাৎ করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে। ফের অনিশ্চয়তায় পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি।

সংক্রমণ আবারো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। মঙ্গলবার (১৮ মে) এই কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর নেত্বত্বে ৩৪ সদস্যের উপস্থিতিতে অনলাইন সভায় এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। সভায় টিকা প্রসঙ্গে বলা হয়, বৈশ্বিক সংকট এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ও বিকল্প অনুসন্ধান করছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তবে কবে কীভাবে এই টিকা দেয়া হবে তার কোনো পরিকল্পনা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গণ-টিকাদানের কথা বলা হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের তরফে। তবে এ পর্যন্ত কতোজন প্রাথমিক শিক্ষক টিকা নিয়েছেন তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষকদের টিকাদানের এই উদ্যোগ বেশিদূর আগায়নি। অনেক শিক্ষকই এ পর্যন্ত টিকা নেননি। টিকার মজুত না থাকায় দ্রুতই তাদের টিকা দেয়া যাবে এমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে টিকাদানের আলাদা কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সাধারণ নাগরিক হিসেবে বয়স বিবেচনায় তারা টিকা নিচ্ছেন।

সম্প্রতি চীন থেকে আসা উপহারের টিকা বিভিন্ন মেডিকেল, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর পরবর্তীতে তা গণহারে দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে তা সময় সাপেক্ষ বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর ও ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারবে না সরকার।

সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় গতকাল বুধবার শনাক্তের হার ছিলো ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। মঙ্গলবার ৭ দশমিক ৫৫, সোমবার ৬ দশমিক ৭৫, রোববার শনাক্তের হার ছিলো ৬ দশমিক ৬৯। এছাড়া ঈদের পর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এই সময়ে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। এই ধরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই ধরনটি নতুন করে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি যেকোনো সময় অবনতি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

এমন অবস্থার মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব ইছমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি মাউশিতে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

আগামী জুন থেকে স্কুল কলেজ খুলতে চায় মন্ত্রণালয়। মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, বর্ধিত ছুটি ২৯মে মের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, এ বছর পরীক্ষা না নিয়ে গ্রেড পয়েন্ট দেয়া হবে না। আমরা সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করব। এরপর এসব পরীক্ষা নেয়া হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, এসএসসি’র জন্য ৬০ দিনের ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। এইচএসসি’র ক্ষেত্রে ৮০দিন ক্লাস করিয়ে ১৫দিন পর পরীক্ষা নেয়া হবে।

মাউশি’র মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠক্রম দেয়া হয়েছে। এই সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে স্কুল ও কলেজ চালুর বিষয়টি করোনা মহামারির ওপর নির্ভরশীল।

জানা যায়, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলে কীভাবে শিক্ষার্থীদের ফল দেয়া হবে এনিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে মাউশি। পরীক্ষা না হলে এসাইনমেন্টের ভিত্তিতে কিংবা বিকল্প কোন পদ্ধতিতে ফল প্রদানের সুপারিশ করবেন।

সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে চলতি বছরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। বার বার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েও তা থেমে যাচ্ছে। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হলেও পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে শিক্ষাবর্ষ আরো পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এবার তিনটি গুচ্ছে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সিদ্ধান্ত হয়েছিল আগেই। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি তাদের বড় অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top