শিক্ষকরা এখনো নিজেদের বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন
 প্রকাশিত: 
 ২ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৪৮
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৪৯
                                গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও বাংলাদেশের শিক্ষা এবং শিক্ষকরা রাজ্য মনোযোগ পাননি। বরং এখনো তারা (শিক্ষকরা) নিজেদের বৈষম্য শিকার বলে মনে করছেন। একইসঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতিসহ নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ রানা খান।
শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকা কলেজে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান — ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শিক্ষা ক্যাডারের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রবন্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের ভূমিকা ও ভাবনা তুলে ধরে মাসুদ রানা খান বলেন, প্রায় দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং লক্ষাধিক আহতের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসন অবসানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন পূরণে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক গণঅভ্যুত্থানের পর যথাযথ মনোযোগ পায়নি। শিক্ষকরা এখনো নিজেদের বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন। যিনি দেশের সাধারণ মানুষকে মানবসম্পদে পরিণত করে তোলেন। অথচ তিনি চতুর্থ গ্রেডের পর আর কোনো পদোন্নতি পান না। এমনকি কারিগরি শিক্ষা ও মেডিকেল শিক্ষায় অধ্যাপক পদ ৩য় গ্রেডের হলেও শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদ ৪র্থ গ্রেডে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদ এক নম্বর গ্রেড হলেও সেখানে যাওয়ার কোন পদসোপান নেই। দীর্ঘদিন যাবত পদোন্নতি পান না শিক্ষা ক্যাডারে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা অভাবনীয়। প্রভাষকরা ১২ থেকে ১৩ বছর যাবত পদোন্নতি পান না, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্পিরিটের সঙ্গে বেমানান।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, আজকের এই দিনে আমরা শুধু একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষার জন্য একত্র হইনি, বরং আমরা এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ধারণ করে এসেছি। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে– মানুষের সম্মিলিত চেতনা ও সাহস কতটা শক্তিশালী হতে পারে।
তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে আমাদের ভূমিকা অপরিসীম। আজ দেশের শিক্ষক সমাজ, বিশেষ করে সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বৈষম্য, পদোন্নতির স্থবিরতা ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি তা শুধু পেশাগত মর্যাদাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, এটি শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক মানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা চাই শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে শিক্ষক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হোক। আমরা চাই একজন প্রভাষক এক যুগেও যেন পদোন্নতি না পাওয়ার বেদনা না বয়ে বেড়ান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনা ছিল বৈষম্যের অবসান। সেই চেতনার উত্তরাধিকার আমাদের কাঁধে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মজিবর রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: