চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে প্রতিবছর গরিব হচ্ছে ৫০ লাখ মানুষ
প্রকাশিত:
৪ মে ২০২৫ ১৪:০৪
আপডেট:
৪ মে ২০২৫ ১৭:১১

প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চিকিৎসা করে। অনেকেই পরে সেই ঋণ শোধ করার জন্য জমি-জমা বিক্রি করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতি আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা ও সাধারণ মানুষের প্রতি অবহেলা স্পষ্ট করে।”
রোববার (৪ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনসের (বিএসএনএস) তিন দিনব্যাপী চতুর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
শাহিনুল আলম বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে আর্থিক চাপের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা ঋণ ও সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে চিকিৎসা করলেও, কখনো কখনো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়া যায় না বা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে জীবনের অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন থেকেও বঞ্চিত হন।”
দেশে স্বাস্থ্যসেবা এখন এক বৃহৎ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েক বছরে দেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, তবে সরকারি ও বেসরকারি খাতে চিকিৎসা খরচ নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসার খরচ কমানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ বা নীতির অভাব দেখা যাচ্ছে।
বিএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, “বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি থাকলেও রোগী সংখ্যা কম। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা—এখানে রোগী সংখ্যার কোনো অভাব নেই, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার অভাবই এই সমস্যা আরও জটিল করে তুলছে।”
তিনি দেশীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির জন্য সরকারের কাছে কিছু সুপারিশও করেন। বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় আরো বিনিয়োগ এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকল্পনায় আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও উন্নত অবকাঠামো।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন। সঠিক স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় সহায়তা এবং স্বাস্থ্য সেবায় সংস্কারই হতে পারে সমস্যার মূল সমাধান। এছাড়া বক্তারা এই খাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন, যেন সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবা সুলভ ও সহজলভ্য হয়ে ওঠে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনস (বিএসএনএস) কর্তৃক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী চতুর্থ অর্ন্তবর্তীকালীন সভায় বৈজ্ঞানিক সম্মেলন, লাইভ সার্জারি, থ্রিডি অ্যানাটমি সেশন এবং অ্যান্ডো ভাস্কুলার সিমুলেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনের মাধ্যমে নিউরোসার্জনরা রোগীদের চিকিৎসা ও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সভায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বিএসএনএস-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদুল হক, সদস্য সচিব ডা. মো. নুরুজ্জামান খান, এবং বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. মাঈনুল হক সরকারসহ দেশের ও বিদেশের ৩০০ জনেরও বেশি নিউরোসার্জন উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: