মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


দুর্ভিক্ষের মুখে উত্তর কোরিয়া


প্রকাশিত:
৫ মার্চ ২০২৩ ০৫:০৪

আপডেট:
২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫২

ফাইল ছবি

পূর্ব এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট বেড়েই চলছে। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে কয়েকদিন পরেই খাবারের অভাবে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

শুক্রবার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

১৯৯০ সালে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ দেশটি। যা ‘আদরুস মার্চ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। ওই বছর দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। যা দেশটির তৎকালীন ২ কোটি জনসংখ্যার ৩-৫ শতাংশ ছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই দুর্ভিক্ষের পর বর্তমানে খাদ্য সংকটের দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া।

পিটারসন ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিশ্লেষক রেনগিফো-কেলার জানিয়েছেন, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের তথ্য, বাণিজ্য তথ্য ও স্যাটেলাইটের ছবি নির্দেশ করছে বর্তমানে দেশটির খাদ্য সরবরাহ ‘মানুষের নিম্নতম প্রয়োজন মেটানোর জন্য যে পরিমাণ প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক কম রয়েছে।’

উত্তর কোরিয়ার বৈরি দেশ দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য জানিয়েছে, দেশটির দুরবর্তী এবং নির্জন অঞ্চলগুলোতে ইতোমধ্যে অনাহারে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়া যেহেতু বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন, তাই এ তথ্যের সত্যতা যাঁচাই করাটাও কঠিন। কেউ কেউ অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার এ দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বে করোনা মহমারি শুরুর আগেই উত্তর কোরিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। মহামারি শুরুর পর দীর্ঘ তিন বছর সীমান্ত বন্ধ রাখা এবং বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।

উত্তর কোরিয়ার খাদ্য পরিস্থিতি যে এখন ভালো নয়, সেটি দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের একটি সিদ্ধান্তেই ওঠে এসেছে। গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক দলের চারদিনের এক বৈঠকে তিনি কৃষি খাতের উন্নতিসাধন ও ‘বড় পরিবর্তনের’ ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা এমন পরিস্থিতির জন্য উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীনদের অব্যস্থাপনাকেই দায়ী করেছেন। এছাড়া বিশ্বের কাছ থেকে নিজেদের আরও বিচ্ছিন্ন করায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে। এছাড়া নিজেদের মূল্যবান অর্থ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও সামরিক খাতে খরচ করার কারণেও দেশটি খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে।

উত্তর কোরিয়ায় ২০২২ সালে ৫ কোটি ৬০ লাখ কেজি গম এবং ৫৩ হাজার ৫৩ হাজার ২৮০ কেজি শস্যদানা রপ্তানি করেছিল প্রতিবেশি দেশ চীন।

উত্তর কোরিয়ায় সরকারিভাবে চীন থেকে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য আসে, এরচেয়ে অবৈধভাবে আরও বেশি আসে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সরকার এর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। এছাড়া চীনের সঙ্গে থাকা সীমান্তে নতুন করে বেড়া দেওয়া হয়।

মূলত সীমান্তরক্ষীদের ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে খাদ্য আনা হয়। কিন্তু যখন এটির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হলো তখন তা পুরো দেশের ওপর প্রভাব রেখেছে।

মানবাধিকার সংস্থার জ্যেষ্ঠ গবেষক লিনা উন বলেছেন, ‘২০২০ সালের আগস্ট থেকে সীমান্তে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি করা হয়। যাতায়াত এবং বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যার মধ্যে বৈধ পথে আসা পণ্যও রয়েছে।’

এই গবেষক বলেছেন, উত্তর কোরিয়া যদি খাদ্য সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় এবং নিজ দেশের মানুষকে বাঁচাতে চায়. তাহলে তাদের সীমান্ত খুলে দিতে হবে, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে।

কিন্তু এর বদলে উত্তর কোরিয়া নিজেদের আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে এবং আরও কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top