বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


ইমরান-বুশরার বিয়ে বৈধতা জানতে চেয়ে নোটিশ আদালতের


প্রকাশিত:
১৮ জুলাই ২০২৩ ২২:৩৭

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৯

 ফাইল ছবি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান ও তার তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবির বিয়ের বৈধতা জানতে চেয়ে নোটিশ জারি করেছেন পাকিস্তানের একটি আদালত।

রাজধানী ইসলামাবাদের একটি জেলা ও সেশন আদালতের বিচারক ও সিভিল জজ কুদরতউল্লাহ মঙ্গলবার এই নোটিশ জারি করেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ। নোটিশে নিজেদের বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আগামী ২০ জুলাই পিটিআই চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

গত এপ্রিলে মুহম্মদ হানিফ নামে এক ব্যক্তি ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন আদালতে পিটিশন জমা দেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তানের ‘মহিলা পীর’ নামে পরিচিত বুশরা বিবিকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ইমরান খান ‘ইদ্দত’ মানেননি, যা ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থী।

ইসলামি আইন অনুসারে কোনো নারী বিবাহবিচ্ছেদের পরপরই দ্বিতীয় কারো সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন না। এক্ষেত্রে ওই নারীকে অন্তত ৪ মাস অপেক্ষা করতে হয়। এই অন্তবর্তী সময়কে বলা হয় ‘ইদ্দত’।

মুহম্মদ হানিফ তার পিটিশনে বলেন, ‘বুশরা বিবির সঙ্গে তার সাবেক স্বামীর বিচ্ছেদ ঘটে ২০১৭ সালের নভেম্বরে। তারপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইমরান খানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। এটা পরিষ্কারভাবে শরিয়া ও ইসলামি আইনের পরিপন্থী।’

যে কাজি এই বিয়ে নিবন্ধন করেছিলেন, সেই মুফতি মুহম্মদ সাঈদের বক্তব্যও পিটিশনে যুক্ত করেছেন মুহম্মদ হানিফ। সেখানে মুফতি মুহম্মদ সাঈদ দাবি করেছেন, ‘ইদ্দত’ নিয়ে সংশয় থাকায় তিনি প্রথমে এই বিয়ে পড়াতে চাননি, কিন্তু বুশরা বিবির এক বোন তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন বিয়ের জন্য শরিয়া আইনের সব ধরনের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা হয়েছে। বুশরা এবং ইমরান খান এখন বিয়ে করতে পারবেন।

তারপরই এই বিয়ে তিনি নিবন্ধন করেন বলে পিটিশনে বলেছেন মুফতি সাঈদ। পরে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসেও এই কাজি বলেন, এই বিয়ে ইসলামি শরিয়াসম্মত নয়, কারণ বুশরার ইদ্দতকাল পেরোনোর আগেই তাকে বিয়ে করেছেন ইমরান।

যে আদালতে পিটিশনটি জমা দিয়েছিলেন মুহম্মদ হানিফ, সেখানকার বিচারক মুহম্মদ আজম খান গত সপ্তাহে সেটি ইসলামাবাদের জেলা ও সেশন জজ আদালতের সিভিল বিভাগে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। তারপর মঙ্গলবার ইমরান ও বুশরা বিবিকে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়ে নোটিশ দিলেন আদালত।

যে কারণে বুশরাকে বিয়ে করেন ইমরান

বুশরা বিবির প্রকৃত নাম বুশরা রিয়াজ ওয়াতু। তবে আধ্যাত্মিক নারী বা মহিলা পীর হিসেবে পরিচিত বুশরাকে পাকিস্তানে ‘বুশরা বিবি’ নামেই জানে।

২০১৭-১৮ সালের দিকে পিটিআইয়ের শীর্ষ নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন মুফতি মুহম্মদ সাঈদ। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি বলেন, বুশরার ভবিষ্যৎবানী প্রদানের ক্ষমতায় আকৃষ্ট হয়েই তাকে বিয়ের জন্য ‘ব্যস্ত’ হয়ে উঠেছিলেন ইমরান খান। কারণ পিটিআইয়ের চেয়ারম্যানের বিশ্বাস ছিল, যদি তিনি বুশরা বিবিকে বিয়ে করেন, সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেন না।

বাস্তবেও অবশ্য তাই হয়েছিল। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল পিটিআই, প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান।

তবে নিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার দেড় বছর আগেই , ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টের বিরোধী এমপিদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে তাকে। পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খানই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।

গত এপ্রিলের আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে মুফতি সাঈদ বলেন, ‘২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ইমরান খান প্রথমবার আমাকে বুশরা বিবির সঙ্গে তার বিয়ে নিবন্ধন করানোর জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাকে (বুশরার) ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’

‘পরে ফেব্রুয়ারিতে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আমাকে অনুরোধ করেন এবং সেবার বুশরা বিবির এক বোন আমাকে নিশ্চয়তা দেন যে এখানে কোনো সমস্যা নেই। শরিয়া আইনের সব শর্ত তারা পালন করেছেন। পরে আমি তাদের বিয়ে পড়াই।’

‘এই বিয়ে অবৈধ। কারণ যখন এটি হয়েছিল, বুশরা বিবির ইদ্দতকাল তখনও শেষ হয়নি।’

তিনি আরও জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানে ইমরান খানের পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। কেবল বুশরা বিবির পরিবার ও স্বজনদের উপস্থিতিতে হয়েছে এই বিয়ে।

এর আগেও দু’বার বিয়ে করেছেন ইমরান খান। প্রথমবার ১৯৯৫ সালে ব্রিটেনের নাগরিক, লেখক ও চলচ্চিত্রকার জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন তিনি। ২০০৪ সালে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সুলাইমান ইসা ও কাসিম নামে দুই সন্তান রয়েছে এই যুগলের।

পরে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রেহাম খান নামের নারীকে বিয়ে করেন ইমরান। তবে সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র ১০ মাস।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top