নেপালে বিক্ষোভে ভয়াবহ সহিংসতা, রাজধানীতে সেনা মোতায়েন : নিহত ৮
প্রকাশিত:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:১৩
আপডেট:
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৩২

সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে হিমালয় কন্যা নামে পরিচিত দেশ নেপালে। বিক্ষোভ দমন করতে রাজধানী কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার।
পুলিশ ও সেনাবাহীর সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। সংঘাতে ইতোমধ্যে ৮ জন নিহতের সংবাদ পাওয়া গেছে।
নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সম্প্রতি দেশটিতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরকারের আদেশে নিষিদ্ধ হওয়ায় উসকে উঠেছে এ বিক্ষোভ। আজ সোমবার সকালে রাজধানী কাঠমান্ডুর বাণেশ্বর এলাকায় প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় এবং অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্ম। বিক্ষোভ দমনে ব্যাপকভাবে জলকামান, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করছে নেপালের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা লাঠি, গাছের ডাল পানির বোতল নিয়ে প্রতিরোধে নেমেছেন। বিক্ষোভে মুর্হুমুহু সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন তারা। বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী জাতীয় পার্লামেন্ট ভবনেও ঢুকে পড়েছেন।
এখন পর্যন্ত রাজধানী কাঠমান্ডুতেই সীমাবদ্ধ আছে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন দপ্তর থেকে ইতোমধ্যে কারফিউ জারি করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেই নোটিশে বলা হয়েছে আজ স্থানীয় সময় বেলা ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জারি থাকবে কারফিউ। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ অমান্য করে সড়কে নেমেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
নেপালের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন শীতল নিবাস, ভাইস প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন, রাজপরিবারের প্রধান প্রাসাদ সিংহ দরবার, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসবভন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নেপালের দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট।
গত ২৮ আগস্ট এক আদেশে নেপালের সরকার জানিয়েছিল, দেশটিতে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমগুলোকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হতে হবে। এজন্য ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরকারের এই নির্দেশ মানেনি। ফলে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর গত ৪ আগস্ট থেকে ফেসবুক, এক্স, হোয়াটসঅ্যাপসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা করার্যকর হয়। তবে চীনা কন্টেন্ট শেয়ারিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক তখনও নিষিদ্ধ হয়নি।
এদিকে সরকারের এ পদক্ষেপের ফলে ক্ষোভ বাড়তে থাকে নেট ব্যবহারকারী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। ৪ আগস্ট থেকেই তারা টিকটকে প্রতিবাদের পাশপাশি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানাচ্ছিলেন। তরুণদের মধ্যে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নেট পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে তরুণ সমাজ আরও ক্ষুব্ধ হয় এবং গতকাল রোববার থেকে বাণেশ্বরসহ কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থী- জনতা।
নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক দিন ধরেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। দেশে আর্থিক বৈষম্য নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছিল ছাত্র-যুবদের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে, আগে থেকে পুঞ্জীভূত হওয়া ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে রোববার।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: