রবিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র ১৪৩২


পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে এক লাখের বেশি মানুষ 


প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:০৭

আপডেট:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৫

ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী এক বিশাল বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। টমি রবিনসন নামে এক ডানপন্থি কর্মীর উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এবং অন্তত ২৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

অন্যদিকে পাল্টা সমাবেশে যোগ দেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, শনিবার লন্ডনের কেন্দ্রীয় এলাকায় অভিবাসনবিরোধী এক বিশাল বিক্ষোভে অংশ নেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। তারা ব্রিটেন ও ইংল্যান্ডের পতাকা হাতে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল করেন। এই বিক্ষোভকে আধুনিক ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ডানপন্থি সমাবেশগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ডানপন্থি কর্মী টমি রবিনসনের উদ্যোগে আয়োজিত “ইউনাইট দ্য কিংডম” শীর্ষক মিছিলে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। অপরদিকে, “স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম” নামের পাল্টা সমাবেশে যোগ দেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। উভয় পক্ষকে আলাদা রাখতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

পুলিশ স্বীকার করেছে, অনুমোদিত রুটের চেয়ে অনেক বড় আকার ধারণ করে বিক্ষোভটি, যা হোয়াইটহলের মতো প্রশস্ত সড়কেও সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। ভিড় সামলাতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের লাথি, ঘুষি, বোতল, ফ্লেয়ার ও অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে।

সংঘর্ষে ২৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যার মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে পুলিশের দাবি— এটাই কেবল শুরু। সহকারী কমিশনার ম্যাট টুইস্ট বলেন, “যারা সহিংসতায় জড়িত তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই মিছিল ব্রিটেনে টানটান এক গ্রীষ্মের পরিসমাপ্তি টানছে, যেখানে অভিবাসীদের থাকার জন্য নির্ধারিত হোটেলগুলো ঘিরে একের পর এক প্রতিবাদ হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা ইউনিয়ন ফ্ল্যাগ ও ইংল্যান্ডের সেন্ট জর্জ ক্রস ছাড়াও আমেরিকান ও ইসরায়েলি পতাকা নিয়ে হাজির হন। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (এমএজিএ)” টুপি পরে আসেন। তারা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং “সেন্ড দেম হোম” লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। অনেকেই শিশুদের সঙ্গে নিয়েও মিছিলে যোগ দেন।

সমর্থকদের উদ্দেশে টমি রবিনসন বলেন, “আজ ব্রিটেনে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা হলো। এটি আমাদের মুহূর্ত”। তিনি একে “দেশপ্রেমের জলোচ্ছ্বাস” হিসেবে বর্ণনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান এবং দাবি করেন— ব্রিটিশরা তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছেন।

টমি রবিনসনের আসল নাম স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন। নিজেকে তিনি “রাষ্ট্রীয় অন্যায় উন্মোচনকারী সাংবাদিক” বলে দাবি করেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জনমত জরিপে শীর্ষে থাকা ব্রিটেনের অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক দল রিফর্ম ইউকে অবশ্য রবিনসনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলাও রয়েছে।

সমাবেশে যোগ দেওয়া স্যান্ড্রা মিচেল নামে এক ব্যক্তি বলেন, “আমরা আমাদের দেশ ফেরত চাই, আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে। আমরা টমিকে বিশ্বাস করি।”

অন্যদিকে পাল্টা বিক্ষোভে যোগ দেওয়া শিক্ষক বেন হেচিন বলেন, “বিদ্বেষ আমাদের বিভক্ত করছে। যত বেশি মানুষকে আমরা স্বাগত জানাবো, তত বেশি আমরা শক্তিশালী হবো।”

এদিকে শনিবার লন্ডনে দুই সমাবেশ ঘিরে প্রায় ১ হাজার ৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়, যার মধ্যে ৫০০ পুলিশ সদস্যকে অন্য অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল। একই দিনে বড় ফুটবল ম্যাচ ও কনসার্ট হওয়ায় পুলিশের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে।

প্রসঙ্গত, এ বছর এখন পর্যন্ত ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ব্রিটেনে পৌঁছেছেন। রেকর্ডসংখ্যক আশ্রয় আবেদন জমা পড়ায় অভিবাসন ইস্যু দেশটির অর্থনীতিকেও ছাপিয়ে রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে। সড়কে ইংল্যান্ডের লাল-সাদা পতাকা ও প্রতীক আঁকা ছড়িয়ে পড়েছে। সমর্থকেরা একে জাতীয় গৌরবের প্রকাশ বললেও, বর্ণবাদবিরোধী কর্মীরা একে বিদেশবিরোধী বার্তা হিসেবে দেখছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top