রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে সরাতে নতুন কৌশল ইইউর
প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০৫
আপডেট:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৮

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস কেনে ভারত। তারই শাস্তিস্বরূপ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ভারত যে পরিশোধনাগারে রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেল শোধন করে, জুলাইতেই তার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। তবে এখন রাশিয়ার থেকে ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় ইইউ।
ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার ওপর ফের নিষেধাজ্ঞার নীতি নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ। এই পরিস্থিতিতে ইইউ-কে ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসাতে বলেছেন ট্রাম্প। তবে শুল্কের চাপ নয়, ইইউ ভারতের ক্ষেত্রে অন্য নীতি গ্রহণ করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাণিজ্য নীতির মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে ভারতকে রাশিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত করাই তাদের কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লেইয়েন বলেছেন, ‘সমমনোভাবাপন্ন এবং একই মূল্যবোধের সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করাই এই মুহূর্তে লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
তিনি আরও জানান, নতুন কৌশল এবং নীতির মাধ্যমে ইইউ-এর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে।
কীভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করবে ইইউ?
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি এবং বেলারুশে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে ইইউ-এর সঙ্গে ভারতের মতানৈক্যকে মেনে নিয়েছেন ইইউ-এর কূটনীতি বিষয়ক আধিকারিক কাজা কালাস। তবে তিনি একথা স্বীকার করে নেন, এই ‘টালমাটাল’ সময়ে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কের ভিত্তিতে ইইউ-এর নতুন সহযোগী প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার দিকে ঠেলে না দিয়ে ভারতের সঙ্গে ইইউ-এর সম্পর্ককে দৃঢ় করার বিষয়েই গুরুত্ব দেন তিনি।
এক ইইউ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা আছে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ থামাতে ভারত সদর্থক ভূমিকাই নিচ্ছে। তারা জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছে এবং তাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফলে আলোচনার রাস্তা খুলেছে।’
ভারতের সঙ্গে ইইউ-এর প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতারও ইঙ্গিত মিলেছে। ভারতকে সর্ববৃহত যুদ্ধসামগ্রী আমদানি করা দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে ইইউ। রাশিয়া থেকে আমদানি করা যুদ্ধাস্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবং যুদ্ধাস্ত্রে বৈচিত্র আনার বিষটি খতিয়ে দেখবে তারা। দেশের নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে উন্নততর করতে ২০২৫-২০২৬-এ ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধার্য করেছে ভারত।
ব্রাসেলের একটি থিংকট্যাঙ্কের কর্মী জেকব ফাঙ্ক কার্কেগার্ড বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যবহার করা অস্ত্র দেখলে যে কেউ তাদের অস্ত্র ভাণ্ডারে বৈচিত্র আনতে চাইবে।’ এমন অবস্থায় ইউরোপ এবং ইউক্রেন ভারতের কাছে অস্ত্র সরবরাহের বকল্প হয়ে উঠতে পারে।
এই মাসের শুরুতে ভারত সফরকালে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, বিশ্বের কিছু দেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাঁচিল তুলছে। ভারত এবং জার্মানির উচিত বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রশস্ত করা। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ‘ইইউ-এর সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বাস্তবায়নে জার্মানির ওপর ভরসা করছে ভারত।
ইউক্রেন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। তার এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে ভারত এবং ফ্রান্স একই সংকল্প নিয়েছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সঙ্গে ইইউ-এর সব মতানৈক্য এই বছরের শেষের মধ্যে মিটে না গেলেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি অনস্বীকার্য।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: