সন্তানকে নির্বাসনে পাঠাচ্ছেন তৃতীয় চার্লস
প্রকাশিত:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৫৩
আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:০৪

সিংহাসনে বসার পর ছেলে প্রিন্স হ্যারি ও পুত্রবধূ মেগান মার্কলেকে দূরে সরিয়ে দিলেন নতুন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। কেবল দূরেই না; তাকে স্থায়ীভাবে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে এমনটিই দাবি করা হচ্ছে। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডকে সিংহাসনচ্যুত করার দৃষ্টান্তকেই তিনি সামনে নিয়ে আসছেন।
ওয়ালিস সিম্পসন নামের বিয়ে বিচ্ছেদ করা এক নারীর প্রেমে পড়ে তাকে অষ্টম এডওয়ার্ডকে সিংহাসন ছাড়তে হয়েছিল। কারণ রাজপরিবারের নিয়ম ওই বিয়েকে সমর্থন করেনি। এটি ১৯৩৬ সালের ঘটনা। এরপর থেকে অষ্টম এডওয়ার্ডকে বাকি জীবন যুক্তরাজ্যের বাইরে কাটাতে হয়েছে। হ্যারি ও মেগানের ক্ষেত্রে সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। সিম্পসন ও মেগান দুজনেই মার্কিন নাগরিক। সবমিলিয়ে নিজের সন্তানকে নির্বাসনে পাঠাতে যাচ্ছেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
সূত্রের বরাতে দ্য ডেইলি বিস্টের খবর জানিয়েছে, এডওয়ার্ডকে নির্বাসনে পাঠিয়ে সিংহাসনের সংকট সামলেছিল তখনকার রাজপরিবার। অর্থাৎ তাকে অবাধ্য, বিপথগামী, গুরুত্বহীন ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ব্রিটেনের বাসিন্দারা তাকে আর মেনে নিতে পারেননি। এরই মধ্যে সেই চক্রে পড়েছেন হ্যারি ও মেগান। তৃতীয় চার্লসের অধীন এ অস্বস্তি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
রাজতন্ত্রের কাঠামোর জন্য একজন একগুঁয়ে রাজার চেয়ে একগুঁয়ে সন্তান কখনো বড়ো হুমকি হতে পারেন না। এর মধ্যেই জেদি ও বদমেজাজের খেতাব পেয়েছেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
এবার তার সিংহাসন আরোহণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে হ্যারি-মেগানের নির্বাসন কীভাবে জলজ্যান্ত হয়ে উঠবে, তা জানালেন বাকিংহাম প্রাসাদে কাজ করা আরেকটি সূত্র।
রাজপরিবারের সাবেক ওই কর্মী জানান, রাজ্যাভিষেকে হ্যারি ও মেগান আমন্ত্রণ পাবেন ঠিকই, কিন্তু উঁচুদরের কোনো আসনে তাদের বসতে দেয়া হবে না। বরং প্রিন্সেস বিয়াট্রিস ও ইউজেনিকে নিয়ে সস্তা আসনই বরাদ্দ থাকবে তাদের জন্য। রাজপরিবার কঠোরভাবেই তাদের এড়িয়ে চলবে।
বাকিংহাম প্রাসাদের সাবেক এককর্মী জানান, সিংহাসনে আরোহণের বিবৃতিতে হ্যারি ও মেগানকে বাইরের দেশেই নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছেন রাজা চার্লস। কোনো রাখঢাক না রেখেই বলা হয়েছে, তারা যাতে বারবার যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করে তার রাজত্বকে বিপর্যস্ত করে না তোলেন।
এর আগে এক খবরে বলা হয়েছে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরেও রাজপরিবারে সহজ ও স্বাভাবিক হতে পারছেন না এ দম্পতি। পরিবারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে।
বিষয়টির আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজপরিবার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার আন্ডারসন। তার মতে, ‘সম্প্রতি মেগান মার্কলে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাতে আমরা এ অস্বস্তি টের পেয়েছি। আসলে এটি একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে। আগের ঘটনাগুলো মাথায় রাখলে বিষয়টি বোঝা কঠিন হবে না। সত্যিকার অর্থে পুরো ঘটনাই দুঃখজনক।’
‘দ্য কাট’ নামের একটি সাময়িকীতে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেগান বলেন, রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে হ্যারি ও তিনি সরে যাওয়ার পর তাদের ওপর মারাত্মক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
দ্য সুইটসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেগান মার্কলে বলেন, রাজপরিবারের আক্ষরিক অর্থে এমন এক কাঠামো দাঁড়িয়েছে, যাতে কেউ যদি তার সন্তানদের ছবিও প্রকাশ করতে যায়, তাহলে তা প্রথমে রয়েল রোটাকে দিতে হবে।
রয়েল রোটা বলতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সংবাদ কাভার করা সাংবাদিক সংঘকে বোঝায়। তিনি আরও বলেন, ‘তাহলে যারা আমার সন্তানদের নিগার (কৃষ্ণাঙ্গ) বলে ডেকেছে, তাদের কেন ছবি দেব। বরং তাদের হাতেই ছবি দেব, যারা আমার সন্তানদের ভালোবাসে।’
ওপেরাহ উইনফ্রেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই রাজবধূ বলতে চেয়েছিলেন, রাজপরিবারের সঙ্গে জীবন টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। তাদের এই সাক্ষাৎকার এতো বেশি স্পর্শকাতর ছিল যে, ওপেরাহ বলেই ফেলেছেন- ‘আপনাদের বক্তব্যে অনেক বেদনাদায়ক ও স্পর্শকাতর বিষয় উঠে এসেছে।’
২০২০ সালে রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে যান হ্যারি-মেগান দম্পতি। পরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। যদিও প্রিন্স ফিলিপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও রানির সিংহাসনে আরোহনের রজতজয়ন্তীর মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের যোগ দিতে দেখা গেছে। এসব কিছুর মধ্যেও রানির মৃত্যুর পর প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের সঙ্গে প্রকাশ্যে আসেন তারা।
সিংহাসনের নতুন উত্তরসূরি ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসের সঙ্গে মিলে তারা রানির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রানির মরদেহে কালো পোশাক পরা এই দম্পতি সস্নেহে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। শোকবার্তায় তারা বলেন, আমরা সবাই রানির কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের সব ভালোবাসা রানির জন্য রেখে দিয়েছি।
তবে সিংহাসন রক্ষায় রাজা আরও নিষ্ঠুর হবেন বলেই ধারণা করা হয়েছে। তিনি চাচ্ছেন না রাজপরিবার আরও কোনো বিতর্কে জড়িয়ে পড়ুক। যে কারণে প্রিন্স হ্যারিকে রাজতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। তারা যাতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের কাছে ঘেঁষতে না-পারে; তা নিশ্চিত করতে ছেলে ও তার বউকে নির্বাসনে পাঠাবেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: