শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৫, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩২


প্রবাসীদের ভোট, তিন পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে ইসি


প্রকাশিত:
৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:২৭

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৪২

ছবি সংগৃহীত

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তিনটি বিকল্প পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন এবং প্রক্সি ভোটিং, এই তিন পদ্ধতিকে বাস্তবায়নের উপযোগিতা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

বুধবার (৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথম তাঁর ভাষণে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনও এই প্রত্যাশা ধারণ করে। আমরা ১৭৮টি দেশে স্টাডি করে দেখেছি, ১১৫টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। সবচেয়ে অনুশ্রিত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং। বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি তাতে দূতাবাসে সেটা সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করেছি। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে।

সানাউল্লাহ বলেন, কমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের পর নির্বাচন, আইন, কারিগরি ও নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বুধবার (৮ এপ্রিল) কর্মশালা করি। যেখানে ১০টি টিম তাদের উপস্থাপনা উপস্থাপন করেছে। ঢাবি, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজক্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিল।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ১০টি উপস্থাপনার মধ্যে তিনটি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা দেখেছি। আমরা যে পদ্ধতিই অনুসরণ করি না কেন, তা বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতসহ অন্যনান্য বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে করতে হবে। যে পদ্ধতিতেই করি না কেন, প্রবাসীকে প্রথমকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটা পদ্ধতি নয়, বরং মিশ্র পদ্ধতি করতে হবে। কেননা, একেক এদেশের পরিস্থিতি একেক রকম। সকল পদ্ধতির সফলতা ও দুর্বলতা আছে। সকল পদ্ধতির জন্য মক টেস্টিং প্রয়োজন হবে। সম্ভবত, সকল পদ্ধতির জন্যই পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে করতে হবে। এটা অনেক দেশ করছে।

অনলাইন ভোট এখনো জনপ্রিয় হতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক দেশ চার পাঁচ বছর ধরে করছে। কর্মশালার আলোচনায় ওঠে আসা পদ্ধতিগুলো ফাইন টিউন করতে হবে। আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম হচ্ছে, একটা অ্যডভাইজরি টিমস গঠন করব, গতকাল যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তাদের নিয়ে। তিনটি পদ্ধতি সফলতা, দুর্বলতা পর্যালোচনা করে কীভাবে দুর্বলতা কাটানো যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবেন। এরপর আমরা অংশীজনদের সঙ্গে বসব। আমরা যাই করি না কেন, যে সময়টা আমরা পাবো তার মধ্যেই কাস্টমাইজ করতে হবে। তাই সময় না পেলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এজন্য আমরা একটা দিনও সময় নষ্ট করছি না। ইনশাআল্লাহ এবার প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে পারব। তবে কোন পদ্ধতিতে হবে সেটা কারিগরি টিম কাজ করার পর চূড়ান্ত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রক্সি ভোটকে আমরা বলেছি, যদি সর্বোচ্চ ভোটারকে আনতে চাই তাহলে প্রক্সি একমাত্র অপশন। এখনো কমিশনের অবস্থান একই আছে। প্রক্সি ভোটের দুর্বলতা অনেকে তুলে ধরেছেন। সফলতাও তুলে ধরেছেন। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও তাই। কোনো অপশনকেই আমরা সিঙ্গেল আউট করছি না। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটি সিঙ্গেল অপশন অ্যাপলিকেবল না। কমবাইন অপশননের দিকে যেতে হবে। আমরা তিনটা পদ্ধতিকে যদি আনা যায়, তাহলে আমরা তিনটা পদ্ধতিকেই আমরা আনবো।

সানাউল্লাহ বলেন, নিবন্ধন অংশটা অনলাইন হবে। যে ধরনের ভোটই হোক না কেন অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এখন প্রবাসী যে দেশে থেকে ভোট দিতে চান, সেই দেশে ওই পদ্ধতি কার্যকর কি না সেটা দেখতে হবে। অনলাইন ভোটিংয়ে যেতে হলে সময় আরও বেশি লাগবে।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার আওতায় আনতে চাই তাহলে কোনো না কোনো পদ্ধতি আনতে হবে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও। পৃথিবীতে ২৫টির মতো দেশ প্রক্সি ভোট করছে। ডিজেবল বা হসপিটালে আছে, গর্ভবতী, শিক্ষার্থী, ফোর্সেসদের জন্য, কারাগারের জন্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতরা, বিদেশে অবস্থান করছে, ডিপ্লোমেটদের করছেন। তবে কিছু কিছু দেশ সবার জন্য প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা করছে। নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইউকে সবার জন্য উনুক্ত রেখেছে। আর অন্যরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেখেছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইলে সব পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমাদের সেই সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে হবে।

কর্মশালায় কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য রাখা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাবিত করিনি। আমরা চেয়েছি সবাই খোলামেলা মতামত দিই। এজন্য আমরা কর্মশালা করেছি। যেন গবেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভালো মন্দ দিক তুলে ধরুক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাত জেগে ছাত্রদের নিয়ে রাতারাত কাজ করে উপস্থাপনা দিয়েছেন। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে যদি বড় পরিসরে অনেক প্রবাসীকে আনতে চাই তাহলে প্রক্সি হচ্ছে অনলি ওয়ান অপশন। তবে বাস্তবতার নিরিখে আমরা অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। অ্যাডভাইজরি কমিটি কী পরামর্শ দেয় সেটা আগে দেখি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তিন স্তরে মক ভোট করা, তারপর নির্বাচনে।

স্থানীয় নির্বাচনের প্রবাসীদের ভোটদান নিশ্চিত করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশ জাতীয় নির্বাচনে রেখেছে। আমরা আগে জাতীয় নির্বাচনে করি। তারপর স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলতে পারবো।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে প্রবাসীরা একটা ভোটও দিতে পারে না সেখানে আমরা এমন পদ্ধতি আনব না, যেখানে প্রবাসীরা হোচট খায়। ইনশালল্লাহ সব টাইমইলি হয়ে যাবে।

কত দিনের মধ্যে প্রবাসীদের ভোটদান পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিস্টেম ডেভেলপ না হওয়ার পর্যন্ত বলা যাবে না, কতদিন সময় লাগবে। তারপর আমরা বলতে পারব। সংস্কার কমিশন পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন। তারা ট্রায়াল পর্যন্ত আটটা ধাপের কথা বলেছেন। এখন ট্রায়াল কতদিন চলবে সেটা নাই। কাজেই এটা কারিগরি বিশেষজ্ঞরাই এটা বলতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ও ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top