কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে দুই মাদ্রাসা শিক্ষকের জবানবন্দি
 প্রকাশিত: 
 ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:৪৫
 আপডেট:
 ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:৫১
                                কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত মাদ্রাসার দুই শিক্ষক আল আমিন ও ইউসুফ আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে বিচারক দেলোয়ার হোসেনের আদালতে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক এই জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, তিনি মাদ্রাসা ইবনে মাসউদ কুষ্টিয়াতে হেফজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ওই বিভাগের ১৭ জন ছাত্র পড়াশোনা করে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত আবু বক্কর নাহিদ একই বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘটনার দুই তিন দিন আগে ইউসুফসহ আবু বকর ও রাহিদ কুষ্টিয়ার মার্কেটে যায়। তাদের মার্কেটে যাওয়া আসার পথে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি তাদের নজরে পড়ে। এরপর গত শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার সাথে আবু বক্কর ও নাহিদের যুক্ত থাকার বিষয়টি জানতে পারেন।
পরে তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে নিজ নিজ বাড়িতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ভাংচুরের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ তাদেরকে দেখালে অভিযুক্ত দুজনকে চেনা সত্ত্বেও স্বীকার করেননি।
অপর শিক্ষক আলামিন একইভাবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন শিক্ষক আল আমিনসহ ওই মাদ্রাসায় সবাই মোবাইল ব্যবহার করত। মোবাইলে তারা ওয়াজ শুনতো। বিশেষ করে মামুনুল হক, হাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীসহ অন্যদের ওয়াজ শুনতে ভালো লাগতো। এই মাদ্রাসা শিক্ষকও একইভাবে অভিযুক্ত দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা থেকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে সরে যেতে পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে সিসিটিভিতে ধারণ করা ফুটেজ নিয়ে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা কোনো কিছু না বলে চুপ থাকেন।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত জানিয়েছেন, অভিযুক্ত দুই মাদ্রাসা শিক্ষক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই মাদ্রাসা ছাত্রের জড়িত থাকার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তা প্রকাশ করেননি। উল্টো তাদেরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। এ ঘটনায় মামলা হলে অভিযুক্তদের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ তাদের দুই শিক্ষককেও গ্রেফতার করে পুলিশ। অধিকতর তদন্তের জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। কী ঘটে নাই কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ৭ ডিসেম্বর অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
রোববার মাদ্রাসার দুই ছাত্র মো. আবু বক্কর ওরফে মিঠুন ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হচ্ছে। এ দুই ছাত্রও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারেন। পুলিশের তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আটজন পুলিশ কর্মকর্তা আসামিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ভাস্কর্য ভাঙায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুই ছাত্র ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: