কপ-৩০-এ সাহসী ও ন্যায়ভিত্তিক সিদ্ধান্ত চায় সিজেএ-বি
প্রকাশিত:
২ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:১০
আপডেট:
৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৩:০০
আসন্ন কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে সাহসী, ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ৫০টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের জোট ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ (সিজেএ-বি)।
সংস্থাটি বলেছে, বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনব্যবস্থা এখনো ধীর এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাস্তব চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই কপ-৩০ হতে হবে সাহসী পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক সংহতি পুনর্গঠনের এক মঞ্চ।
রোববার (২ নভেম্বর) রাজধানীর ক্রাউন প্লাজা হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘কপ-৩০ : একসাথে সিএসও অবস্থান নির্ধারণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানানো হয়।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসি)-এর অধীনে গৃহীত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে গতি না আনলে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা অধরাই থেকে যাবে।
অনুষ্ঠানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন ভবিষ্যতের হুমকি নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা। যুদ্ধের পেছনে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয় কিন্তু জলবায়ু মোকাবিলায় সহায়তার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো দ্বিধাগ্রস্ত– এটি নৈতিকতা ও ন্যায়ের প্রশ্ন।’
সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘কপ-৩০-এ আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে, আমরা কি সত্যিই ১.৫°C লক্ষ্যের পথে আছি? জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতে উন্নত দেশগুলোর অর্থায়ন, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা সহায়তা এখন সবচেয়ে জরুরি।’
তিনি গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ)-এর বাস্তবায়ন কাঠামোকে কার্যকর করার আহ্বান জানান, যাতে অভিযোজন পদক্ষেপগুলো পরিমাপযোগ্য সুফল বয়ে আনে।
সিপিআরডির সহকারী ব্যবস্থাপক শেখ নুর আতিয়া রাব্বি নাগরিক সমাজের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের নুজহাত জাবিন, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের তালহা জামাল, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের হাসিন জাহান, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের মানীশ কুমার আগরওয়াল এবং অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার বাংলাদেশের মোহাম্মদ আকমল শরীফ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুবর্ণা বড়ুয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উপসচিব ড. শাহ আব্দুল সাদী, অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক এবং পিকেএসএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদও বক্তব্য দেন।
সিজেএ-বি জানায়, বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহযোগিতার চেতনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কপ-৩০ হতে হবে বৈশ্বিক সংহতি পুনর্গঠনের মঞ্চ। বিশ্বনেতাদের এখনই সাহসী ও যৌথ পদক্ষেপ নিতে হবে– আরও একবার ব্যর্থ হওয়া যাবে না।
সিজেএ-বি’র প্রধান দাবিগুলো হলো–
#‘বাকু টু বেলেম রোডম্যাপ টু ১.৩টি’-এর আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সরকারি, অনুদানভিত্তিক ও স্বল্পসুদে অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
#প্যারিস চুক্তির ধারা ৯.১ অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোর আর্থিক অঙ্গীকার পূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন।
#আসন্ন এনডিসি ৩.০-এ ১.৫°C পথরেখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত করা।
#জিজিএর জন্য কার্যকর সূচক কাঠামো চূড়ান্ত করা এবং তা বাড়তি অর্থ, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা সহায়তার সঙ্গে যুক্ত করা।
#লস অ্যান্ড ড্যামেজ এজেন্ডাকে কপ সম্মেলনের স্থায়ী আলোচ্যসূচি করা এবং এনসিকিউজি কাঠামোর আওতায় দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
#কপ-৩০-এ জাস্ট ট্রানজিশন অ্যাকশন মেকানিজম গ্রহণ করা, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
#শক্তিশালী জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান গৃহীত করা, যাতে লিঙ্গ সমতা, আদিবাসী অধিকার ও মানবাধিকার সব প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
সিজেএ-বি’র ভাষায়, কপ-৩০ হবে শুধু নীতিনির্ধারণের স্থান নয়, এটি হতে হবে ন্যায়ের দাবি বাস্তবায়নের এক যুগান্তকারী মুহূর্ত।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: