চাকরির বয়স ২ বছরের কম থাকলে সচিব হতে পারবেন না
 প্রকাশিত: 
 ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১১:০১
 আপডেট:
 ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:০১
                                অতিরিক্ত সচিব পদে চাকরির বয়স ২ বছরের কম থাকলে তিনি আর সচিব পদে পদোন্নতি পাবেন না। এ রকম একটি অলিখিত অনুশাসনের কথা বলে সাম্প্রতিক সময়ে ১০ম ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকে সচিব পদে পদোন্নতির ফিটলিস্ট প্রস্তুত করা হয়। ফলে সরকারের আস্থাভাজন প্রথমসারির কয়েকজন আমলা আর সচিব হতে পারছেন না। কিন্তু এ নিয়ম বহাল থাকলে প্রতিটি ব্যাচেই এমন বিপত্তি ঘটবে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় প্রশাসনজুড়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সংক্ষুব্ধদের মধ্যে কয়েকজন জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ছাত্রলীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন। শুধু তিনি নন, পারিবারিকভাবে তাদের অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির চিন্তাধারার মধ্যে বড় হয়েছেন। পরিবারের কেউ কেউ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং এখনও আছেন। বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে প্রশাসনে অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছেন, তাদের মধ্যে তারা অন্যতম।
এ ছাড়া দলীয় পরিচয় থাকা সত্ত্বেও কর্মজীবনেও তারা কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে চাকরির বয়স ২ বছর না থাকার অজুহাত তুলে তাদেরকে সচিব না-করা মহলবিশেষের ইন্ধন ছাড়া আর কিছু নয়। তারা বলেন, আমাদের একান্ত বিশ্বাস, সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেবেন না, যাতে তাদের সচিব হওয়ার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে তাদের কথা জানতে পারলে, প্রধানমন্ত্রী এমন অনুশাসন কখনও দেবেন না।
সূত্র জানায়, চাকরির বয়স বেশিদিন না থাকায় সম্প্রতি একজন সচিবকে কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর ওই পোস্টিং আদেশ সংশোধন করা হয়। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নজরে আনার পর মৌখিকভাবে অনুশাসন দিয়ে বলা হয়েছে, যাদের চাকরির বয়স ২ বছরের বেশি থাকবে না, তাদেরকে সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রয়োজন নেই। এর কিছুদিন পর সচিব পদে পদোন্নতির ফিটলিস্ট তৈরি করতে এসএসবির বৈঠক বসে।
সেখানে ১০ম ব্যাচ থেকে ২০-২৫ জনকে ফিটলিস্টভুক্ত করা হয়। কিন্তু যাদের চাকরির বয়স ২ বছরের কম রয়েছে তাদেরকে ফিটলিস্টের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ১০ম ব্যাচ থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন শুরু হলে গোপন খবরটি চাউর হয়। এখন পর্যন্ত এ ব্যাচের ৩ জনকে সচিব করা হয়েছে। কিন্তু যারা সচিব হওয়ার ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত ছিলেন তাদের ২/১ জন বাদ পড়ায় অনেকে বিস্মিত হন।
বিশেষ করে বিগত বিএনপি সরকারের সময় ১০ম ব্যাচের যে দু’জন কর্মকর্তা প্রকাশ্যে সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও পদোন্নতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের ১ জন এই অনুশাসনে বাদ পড়েছেন। অথচ সিনিয়রদের পদোন্নতি বঞ্চনা ও নিজেদের পদোন্নতির দাবিতে ২০০৬ সালে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কক্ষের সামনে তারা কয়েক দফায় প্রতিবাদী বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের একজনকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সচিব করা হলেও অপরজন বাদ পড়েন।
এরপর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যে ক্ষোভের উদ্রেক করে। একপর্যায়ে জানা যায়, তার চাকরির বয়স ২ বছরের কম থাকায় তাকে সচিব পদে পদোন্নতির ফিটলিস্টেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এরপর বিষয়টি প্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের এজিএম প্রস্তুতি বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সেখানে সিনিয়র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।
তারা তখন বলেন, এর ফলে শুধু ১০ম ব্যাচ নয়, ১১ ও ১৩তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির ফিটলিস্ট থেকে বাদ পড়বেন। তাহলে ভবিষ্যতে প্রশাসনে কারা নেতৃত্ব দেবেন-এটিই এখন বড় প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী সত্যিই যদি এমন অনুশাসন দিয়ে থাকেন, তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে সেটি শিথিল করার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। সঠিকভাবে উপস্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় বুঝবেন।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে এটি কোনো লিখিত অনুশাসন নয়। এর ফলে কিছু কর্মকর্তা তো সচিব হতে পারবেন না। যাইহোক, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দেখা যাক।’
এদিকে বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা আশা করছি শিগগির এ বিষয়ে সংশোধিত সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি বহাল রাখা হয়, তাহলে অতিরিক্ত সচিব পদে ১ বছর চাকরি করার পর সচিব পদে ফিটলিস্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে।
সেখানে ব্যাচের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া যাবে না। কারণ, পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত সচিব পদে ১ বছর দায়িত্ব পালন করলেই তাকে সচিব করা যায়।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: