রোহিঙ্গাদের সিম দিতে চায় সরকার, শুরুতে ১০ হাজার
প্রকাশিত:
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১১:২২
আপডেট:
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১৬:১০

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে সিম কেনার সুযোগ নেই। তবু অনেকের কাছেই বাংলাদেশি ও মিয়ানমারি অপারেটরের সিম রয়েছে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসেই এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চার অপারেটরকে নিয়ে আলোচনা হয়।
২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন। এর আগেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১০ হাজার সিম দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা চলছে।
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এতদিন তাদের সিম ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। কিন্তু বাস্তবে অবৈধভাবে দুই দেশের সিমই ব্যবহার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে—শিবিরকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশি অপারেটরের সিম ব্যবহার করছে, আবার মিয়ানমারের সিম দিয়েও অপরাধমূলক কাজ করছে।
২০২৩ সালে আগের সরকার রোহিঙ্গাদের টেলিটক সিম দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী সিম কিনতে পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক প্রয়োজন। যেহেতু রোহিঙ্গাদের এসব নেই, তাই বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। আলোচনায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা নম্বর সিরিজ রাখা হবে এবং জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) নিবন্ধিত ‘প্রোগ্রেস আইডি’র ভিত্তিতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের সিম দেওয়া হবে। ইউএনএইচসিআর সরাসরি এই সিম বিতরণ করবে।
ডেটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ডেটা সেন্টারে। তবে পুরো ডেটা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নভেম্বরের আগে শেষ হবে না। সরকারের লক্ষ্য যেহেতু চলতি মাসেই বিতরণ শুরু করা, তাই শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে প্রথম ধাপে ১০ হাজার সিম বরাদ্দ দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।
অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ দেবে, যার খরচ বহন করবে ইউএনএইচসিআর বা সরকার। নতুন সিম চালুর পর জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে নেওয়া সিমগুলো বন্ধ করবে সরকার।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সঠিকভাবে শনাক্ত না করলে ক্যাম্পে সিম দেওয়া সম্ভব নয়। শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়েই এখন আলোচনা চলছে।’
রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে সিম দেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানায় গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানের সিসিএও তানভীর মোহাম্মদ বলেন, ‘এতে অনেকে বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।’
তবে রবি আজিয়াটার সিসিআরও সাহেদ আলম মনে করেন, নিরাপত্তার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিলে সিম কর বাবদ অপারেটরদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলালিংকের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান তাইমুর রহমান নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরকে বিশেষায়িত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। নতুন সিম দেওয়ার আগে পুরোনো অবৈধ সিম জব্দ ও নথিভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: