‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আইসিজের মতামতের নৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে’
প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৯:২৪
আপডেট:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৯:২৭

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) মতামতের আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এর নৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে। এ মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রগুলো নিজস্ব আইন সংশোধন বা শক্তিশালী করতে পারে।
রোববার (১৭ আগস্ট) বিকেলে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।
আলোচনায় মূল বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র সিথ্রিআর-এর উপদেষ্টা ও এমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গঠিত হয় ১৯৪৫ সালে। তখন দেওয়া সংজ্ঞাগুলো এখন পরিবর্তন করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যানে শিশু, নারী, শারীরিকভাবে অক্ষম ও তরুণদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আইনুন নিশাত আরও বলেন, কিয়োটো প্রটোকলের আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, কোন দেশ কতটা গ্রিনহাউস গ্যাস কমাবে। প্যারিস চুক্তি পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটিকে কার্যকর করতে হবে। প্যারিস চুক্তির সময় নিকারাগুয়া আপত্তি তুলেছিল যে নিঃসরণ কমানোর বাধ্যবাধকতা না থাকলে চুক্তির কোনো মূল্য থাকবে না। তখন ‘গ্লোবাল স্টকটেকিং’-এর ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তী স্টকটেকিং হবে ২০২৮ সালে, যেখানে বলা হবে কোন দেশ কতটুকু গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়েছে। ঘোষিত মাত্রায় তা করতে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রগুলোকে দায়বদ্ধতার মুখোমুখি হতে হবে।
ন্যাকোমের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, আদালতের এ মতামত নতুন মাত্রা যোগ করেছে। না মানলে কিছু করার সুযোগ নেই, তবে এর রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। প্রতিটি রাষ্ট্র এ মতামতের আলোকে নিজস্ব আইন পরিবর্তন বা শক্তিশালী করতে পারে।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, মতামতে বলা হয়েছে জলবায়ুর ক্ষতি রোধে সব রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তৃণমূলের মানুষ, নারী ও শিশু।
তিনি আরও বলেন, আদালত জেন্ডার জাস্টিসকে মানবাধিকারের সঙ্গে যুক্ত করতে পারত, কিন্তু তা করা হয়নি।
ফ্রেন্ডশিপের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কাজী এমদাদুল হক বলেন, পরিবেশ বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ‘ক্লাইমেট জাস্টিস ডেস্ক’ করা যেতে পারে। সেখান থেকে অভিযোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী শামসুদ্দোহা বলেন, যে প্রক্রিয়ায় জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়, যে প্রক্রিয়ায় প্যারিস চুক্তি হয়েছে, সেটি পরিবর্তন করতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে দায়ী দেশগুলোকে অনুপাতে নিঃসরণ কমাতে হবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ নন্দন মুখার্জী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির জন্য এটি কতটা দায়ী, তা নির্ধারণ না করলে রাষ্ট্রের সক্ষমতা তৈরি হবে না এবং আন্তর্জাতিক সমাধানও পাওয়া যাবে না।
লির্ডাসের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, আদালতের মতামত ভুক্তভোগী মানুষের কাছে তেমন মূল্য বহন করে না। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে মানুষ ভুক্তভোগী হলেও তারা ক্ষতিপূরণ পায় না। ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেক সময় তত দিনে অঞ্চল বিলীন হয়ে যায়।
সিসিজে-বি’র নির্বাহী পরিচালক হাফিজুল ইসলাম খান বলেন, কিয়োটো প্রটোকল ভালো একটি চুক্তি ছিল। এতে প্রতিটি দেশের নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ছিল। তবে কয়েকটি দেশ সরে আসায় চুক্তি অচল হয়ে পড়ে। আদালতের মতামত বলছে, এ প্রটোকল এখনও সক্রিয়।
হিউম্যান সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী বোরহানুল আশেকীন বলেন, জলবায়ু আলোচনায় আদালতের এ মতামত একটি অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে। উন্নত দেশগুলো আদালতের সদস্য হওয়ায় এ মতামত তাদের ওপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: