আজ চালু হচ্ছে খুলনার নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার
প্রকাশিত:
২৬ আগস্ট ২০২৫ ১১:১৮
আপডেট:
২৬ আগস্ট ২০২৫ ১৩:২৭

অবশেষে আলোর মুখ দেখতে চলেছে খুলনায় নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এটি হস্তান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন কারাগার পরিচালনার জন্য ৬শ’ জনবল নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। আগের কারাগারটি শতবর্ষী পুরোনো ও অতিরিক্ত জনাকীর্ণ। নতুন কারাগার চালু হলে বর্তমান পুরোনো কারাগার থেকে বন্দী স্থানান্তরসহ ধাপে ধাপে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
নতুন কারাগারের অবস্থান ও ধারণক্ষমতা
নতুন কারাগার কমপ্লেক্সটি খুলনা সিটি বাইপাস (রূপসা ব্রিজ রোড) রোডে ৩০ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে। এটি ৪ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হলেও, বর্তমান অবকাঠামোতে ২ হাজার বন্দি থাকতে পারবে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও ভবন নির্মাণ করা হবে।
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ (পিডব্লিউডি) বলছে, শেষ পর্যায়ের নির্মাণ কাজ ধারাবাহিক গতিতে চলছে। সম্প্রতি নির্মাণস্থল পরিদর্শনকালে খুলনা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান এবং জেলার মুহাম্মদ মুনীর হোসাইন ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরানো কারাগার যেমন ছিল
খুলনার বর্তমান পুরানো কারাগারটি ১৯১২ সালে ভৈরব নদীর তীরে নির্মিত। মূলত ৬৭৮ জন বন্দির ধারণক্ষমতা নিয়ে তৈরি করা হলেও বর্তমানে এখানে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি বন্দি রয়েছে। তাছাড়া, কারাগারের পুরোনো এই কাঠামোটি নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্যও অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। শত বছর পূর্ণ করে বর্তমানে যেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় হুড়মুড় করে ধসে পড়তে পারে বলে কারাগারে আটক বন্দিরা আশঙ্কা করছেন। ২১ বছর আগে ২০০৪ সালে এ ভবনটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ হিসেবে চিহ্নিত করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন।
নতুন কারাগারের বৈশিষ্ট্য
নতুন কমপ্লেক্সটি একটি আধুনিক আবাসিক এলাকার মতো দেখতে, যেখানে টাইলসযুক্ত হাঁটার পথ, সাজানো বাগান ও নতুন রং করা ভবন রয়েছে। এখানে মোট ৫২টি ভবন নির্মিত হয়েছে।
নতুন কারাগারটিতে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আলাদা ইউনিট, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিশেষ ব্যারাক এবং নারী বন্দিদের জন্য হাসপাতাল, কাজের জায়গা ও একটি মোটিভেশন কেন্দ্রসহ আলাদা অংশ রয়েছে। এছাড়া, এখানে ৫০ শয্যার একটি সাধারণ হাসপাতাল, কারা কর্মীদের সন্তানদের জন্য একটি স্কুল, একটি গ্রন্থাগার, ডাইনিং হল, সেলুন ও লন্ড্রি সুবিধাও রয়েছে। শিশুসহ নারী বন্দিদের জন্য একটি বিশেষ ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে, যেখানে শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। পুরুষ ও মহিলা উভয় বন্দির জন্যই আলাদা নামাজের ঘর, কাজের জায়গা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের স্থান রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ যা বলছেন
জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রকল্পের বিলম্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে কারাগারটি আমাদের বুঝে নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পিডব্লিউডি সময়মতো কাজ শেষ করতে পারেনি। হস্তান্তর সম্পন্ন হলে এবং কর্মী নিয়োগ হলে আমরা বন্দিদের স্থানান্তর শুরু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অক্টোবরের মধ্যে কারাগারটি হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছি।’ নতুন কারাগারের জন্য ৬০০ কর্মী নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে। পুরোনো কারাগারে বর্তমানে প্রায় ২০০ কর্মী রয়েছেন। নতুন কারাগারটি চালু হলে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হবে।
গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বিলম্বের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ২৫ মে হস্তান্তরের তারিখ নির্ধারিত ছিল। ঠিকাদারের সমস্যার কারণে সময়মতো নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আগস্ট শেষে বা সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য সব রকমের চেষ্টা করছি।’
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মূল কাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে চূড়ান্ত রং করা ও ভেতরের ফিনিশিং কাজ। তিনি আরও জানান, প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে এবং কমপ্লেক্সে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সৌর বিদ্যুৎ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে।
নাগরিক প্রতিনিধি কি বলছেন
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি সভাপতি শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, বর্তমান কারাগারটি অতিরিক্ত জনাকীর্ণ এবং এতে মৌলিক সুবিধার অভাব রয়েছে। এই নতুন কমপ্লেক্সটি আমাদের বহু দিনের দাবি পূরণ করতে চলেছে। এই আধুনিক কারাগারটি নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি বন্দিদের মানবিক মর্যাদাও নিশ্চিত করবে বলে আশা করছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৪৪ কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেট এবং ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে খুলনায় কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এরপর একাধিকবার সময়সীমা বাড়ানো এবং দু’বার বাজেট সংশোধনের পর বর্তমানে প্রকল্পের খরচ ২৮৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তারপরও ঠিকাদারের গড়িমসির কারণে এখনও শতভাগ কাজ শেষ হয়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: