বুধবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৫, ৩০শে আশ্বিন ১৪৩২


সন্দেহ আর টাকা আত্মসাতের ভয়—স্ত্রীকে হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রাখলেন স্বামী


প্রকাশিত:
১৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:২৮

আপডেট:
১৫ অক্টোবর ২০২৫ ২২:২৩

ছবি : সংগৃহীত

প্রায় দুই দশকের দাম্পত্য জীবনের করুণ পরিণতি—সন্দেহ এবং টাকা আত্মসাতের ভয় থেকেই ঘটেছে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মরদেহ ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন মো. নজরুল ইসলাম (৫৯)। সন্তানদের ফুফুর বাসায় রেখে আত্মগোপনে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বংশাল থানাধীন নবাবপুর রোড এলাকা থেকে কলাবাগান থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যে বাসার ওয়্যারড্রব থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো দা।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।

তিনি বলেন, গত ১২ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে নজরুল ইসলাম কলাবাগানে একটি ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন ঘরের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা। স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের প্রতি দীর্ঘদিনের সন্দেহ— পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ভয় তাকে উত্তেজিত করে। রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে হত্যা করেন তিনি। এরপর মরদেহ গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন।

পরে রক্তমাখা তোশক উল্টিয়ে, মেঝে পরিষ্কার করে এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন। পরদিন সকালে নজরুল ইসলাম তার বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানায়, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এসময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর নজরুল ইসলাম তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারে করে পালিয়ে যান।

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, এ বিষয়ে সন্দেহ হলে নিহত নারীর ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও দুই মেয়ে ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কলাবাগান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি টিম নিহত নারীর ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়ে ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ঘরের মধ্যে রাখা ডিপ ফ্রিজ খুলে ফ্রিজের ওপর থেকে মাছ-মাংস সরালে ফ্রিজের ভেতর চাদর দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় তাসলিমা আক্তারের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ।

তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের লোকজন ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওইদিন রাতে তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

মামলাটি রুজুর পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ নিহতের স্বামী মো. নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার নিজ বাসার ওয়্যারড্রব থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার নজরুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিসি মাসুদ আলম জানান, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। এমনকি সে ভয় পেতো যে স্ত্রী তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নেবে। এই সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রমনা বিভাগের ডিসি বলেন, ঘাতক স্বামীর একটি অ্যাকাউন্টে ফিক্সড ডিপোজিট করা ছিল এক কোটি টাকা। নমিনি ছিলেন তার স্ত্রী। আরেকটি অ্যাকাউন্টে ৪০ লাখ টাকা ছিল সেটাও নমিনি স্ত্রীর নামে। এই টাকা নেওয়ার জন্য নজরুল ইসলামকে তার স্ত্রী যে-কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে বলে ধারণা ছিল গ্রেপ্তার নজরুল ইসলামের।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top