মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১


ক্যারিয়ার নষ্ট, সংসারে অশান্তির আশঙ্কায় মিতুকে হত্যা


প্রকাশিত:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:১৮

আপডেট:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:১৯

ফাইল ছবি

বিতর্কের মধ্যেই চট্টগ্রামে আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। এতে দাবি করা হয়েছে, 'পরকীয়ার জেরে পারিবারিক অশান্তি আর তার জেরে ক্যারিয়ার নষ্টের আশঙ্কায়' মিতুকে খুন করেছেন তাঁর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। চার্জশিটে বাবুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং সম্প্রতি পিবিআইপ্রধানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন।

হত্যাকাণ্ডের সাত বছরের বেশি সময় পর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ প্রসিকিউশনে ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআই ইন্সপেক্টর আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। লাগেজভর্তি করে দুই হাজার ৮০ পৃষ্ঠার মামলার কেস ডকেট চার্জশিটের সঙ্গে জমা দিয়েছে পিবিআই।

চার্জশিটে বাবুলসহ সাত আসামিকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত দুই আসামিকে পলাতক দেখানো হয়েছে। তবে এ খুনের খলনায়ক কামরুল ইসলাম মুছার কোনো হদিস পায়নি বলে দাবি করেছে পিবিআই।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম মুছা ও খায়রুল ইসলাম। এর মধ্যে মুছা ও খায়রুল পলাতক। চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে- আবু নসর, শাহজামান, সাইদুল ইসলাম শিকদার, নুর নবী ও রাশেদুল ইসলামকে। এর মধ্যে নুর নবী ও রাশেদুল পুলিশের সঙ্গে কথিত ক্রসফায়ারে মারা গেছেন।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, 'বাবুল আক্তারের পরকীয়ার বিষয়টি তাঁর স্ত্রী এক সময় জেনে যান। তার পর তাঁদের পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। বাবুল আক্তার তখন তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারণ তাঁর পরকীয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে চাকরি জীবনে প্রত্যাশিত উন্নতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতে শুরু করেন। পরকীয়ার কারণে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ তথা ডিভোর্স হয়ে গেলে চাকরিতে তাঁর ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ না হওয়ার ভয় ছিল। তাই ক্যারিয়ার ঠিক রাখতেই স্ত্রীকে খুন করেন বাবুল আক্তার।'

এতে আরও বলা হয়, স্ত্রীকে খুন করার জন্য মুছার সঙ্গে তিন লাখ টাকার চুক্তি করেন বাবুল। বাবুল তাঁর কথিত ব্যবসায়িক অংশীদারের মাধ্যমে বিকাশে মুছাকে টাকা দিয়েছেন।

পিবিআইর পুলিশ সুপার (মেট্রো) কাজী নাইমা হাসান বলেন, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করেছে পিবিআই। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তদন্তভার পাওয়ার পর আড়াই বছরে তদন্ত চলাকালে মিতু খুনে জড়িতদের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর মিতু খুনের মামলার পরবর্তী শুনানিতে চার্জশিট গ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

সাক্ষী ৯৭ : মিতুকে খুন করার পর নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও পিবিআইতে পাঁচজন ইন্সপেক্টর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা আলোচিত মামলাটি তদন্ত করেছেন। তাঁরা হলেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম, ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার চাকমা ও ইন্সপেক্টর আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এই পাঁচ তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও বাবুল আক্তারের কথিত ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুল, মুছার স্ত্রী, বিকাশের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

২১ আলামত: মিতুকে যে অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছিল, তা এ মামলার প্রধান আলামত। এ ছাড়া মিতু খুন হওয়ার সময় পোশাক, মোটরসাইকেল, ছুরি, উপহারের বই, খুন করতে চুক্তি করে অর্থ লেনদেনের বিকাশের ট্রানজেকশনের ডিজিটাল ডুকমেন্ট, ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজসহ ২১ ধরনের আলামত জব্দ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সেই আলামত গতকাল আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

স্বীকারোক্তি: মিতু খুনে সরাসরি অংশ নেওয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে মিতু হত্যার দায় স্বীকার করেন। মিতু খুনে অস্ত্র সরবরাহের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আরেক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা। এ ছাড়া সাইফুলসহ আরও বেশ কয়েকজন সাক্ষী এ মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

তাদের জবানবন্দির আলোকে চার্জশিটে বলা হয়, তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে স্ত্রী মিতুকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন বাবুল। নিজেকে আড়ালে রাখতে প্রচার করেন- জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে। মিতুকে খুনের মিশনে নেতৃত্ব দেয় বাবুলের সোর্স কামরুল ইসলাম মুছা। সঙ্গে ছিল ওয়াসিম, আনোয়ারসহ ছয়জন। হত্যাকাণ্ডের আগে একটি বিশেষ নম্বরে মুছার সঙ্গে গভীর রাতে বাবুলের কথা হতো। বাবুল সেখানেই খুনের পরিকল্পনা ঠিক করে দেন মুছা ও অন্য আসামিদের। পরে মিতু খুনে ব্যবহার করা পয়েন্ট ৩২ বোরের পিস্তলটি ২০১৬ সালের ২৮ জুন পুলিশ ভোলা ও মনিরের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ২০২১ সালের মে মাসে আসামি করা হয় বাবুলকে। তিনি এখন ফেনী কারাগারে বন্দি।

সম্প্রতি তিনি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নালিশি মামলা করেছেন। পিবিআইর তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে বাবুলের পরিবারসহ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top