ব্যাংক খাতে বিপর্যয়, সংকট মোকাবিলায় আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ
প্রকাশিত:
১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৪:৩০
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ২২:০৩

বৈশ্বিক মন্দার পাশাপাশি দেশীয় প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাতে বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। উদ্বেগজনক হলো, এরই মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সব সূচকে নেতিবাচক অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা আগামী বছর বিশ্বব্যাপী ভয়ানক মন্দার শঙ্কা প্রকাশ করে ব্যাংক খাতেও এর প্রভাব পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ, সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রা বিনিময় হারে অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে ব্যাংক খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন খাতে ২০০৮ সালে ধস নামার মধ্য দিয়ে যে মন্দার সূচনা ঘটেছিল, তার প্রভাবে প্রথমেই ধসে পড়েছিল দেশটির ব্যাংকগুলো। ব্যাংক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে দেশটিতে সরকারের তহবিল থেকে তখন লাখ লাখ কোটি ডলার প্রদান করতে হয়েছিল। তার মানে বিপর্যয় রোধে আমাদের আগেভাগেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে পরে আর তা সামাল দেওয়া যাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়ের প্রধান দুটি উৎস-ঋণ ও সম্পদের সুদ থেকে আয়ের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় পরিস্থিতিও আশানুরূপ নয়। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রষ্ঠিানগুলো ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছে, কিন্তু আদায়ের হার খুবই নগণ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-বাংলাদেশে ঋণ পরিশোধে যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা চলতে থাকলে ব্যাংকগুলো ভবিষ্যতে তারল্য সংকটে পড়তে পারে, এমনকি কিছু ব্যাংক দেউলিয়াও হতে পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাংক খাত বিপর্যস্ত হলে তা অর্থনীতির জন্য আরও খারাপ পরিণতি বয়ে আনবে, যার শিকার হবে মূলত দেশের সাধারণ মানুষ। এজন্য এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
ইতঃপূর্বে ‘ব্যাংকিং খাত তদারকি ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছিল-দেশের ব্যাংক খাতে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর অবাধ বিচরণ বাড়ছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে এ চক্রটি পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছে এবং তাদের এ সিন্ডিকেটের কাছে সবাই জিম্মি হয়ে পড়ায় গত এক দশকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০০ শতাংশের উপরে।
বিপুল অঙ্কের এ খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক অকার্যকর হয়ে পড়েছে-এ কথা উল্লেখ করে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুস্থ ও নিরাপদ ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করাসহ ২২ দফা সুপারিশ করেছিল সংস্থাটি, যার অধিকাংশই আলোর মুখ দেখেনি। আশার কথা, সরকার ইতোমধ্যে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কেবল কমিশন গঠন করলেই হবে না; স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে সেই কমিশনের। তা না হলে যেসব লক্ষ্য নিয়ে কমিশন গঠিত হবে, তা ভেস্তে যাবে। আসন্ন বিপর্যয় মোকাবিলায় ব্যাংক ও আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের পাশাপাশি শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ আদর্শ ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: