বুধবার, ২০শে আগস্ট ২০২৫, ৫ই ভাদ্র ১৪৩২


জুমার নামাজ না পড়লে জেল-জরিমানা মালয়েশিয়ার এক প্রদেশে


প্রকাশিত:
২০ আগস্ট ২০২৫ ১২:৩৮

আপডেট:
২০ আগস্ট ২০২৫ ১৩:১২

ছবি সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার তরেংগানু প্রদেশে বৈধ কারণ ছাড়া জুমার নামাজে অনুপস্থিত মুসলিম পুরুষরা এখন সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা ৩ হাজার রিঙ্গিত (প্রায় ৫২৫ পাউন্ড) জরিমানার মুখোমুখি হবেন শরিয়াহ আইনের অধীনে।

সোমবার প্রদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শরিয়াহ ক্রিমিনাল অফেন্সেস (তাকযির) আইনের আওতায় এ শাস্তি কার্যকর হবে। তরেংগানু প্রদেশ বর্তমানে রক্ষণশীল প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পাস)-এর শাসনে রয়েছে।

প্রদেশের নির্বাহী কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ খালিল আবদুল হাদি সতর্ক করে বলেন, এখন থেকে একবার জুমার নামাজ বাদ দিলেই তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর আগে টানা তিনবার জুমার নামাজ না পড়লে শাস্তির বিধান ছিল।

তিনি মালয়েশিয়ার সংবাদপত্র বেরিতা হারিয়ানকে বলেন, এই সতর্কতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জুমার নামাজ শুধু ধর্মীয় প্রতীক নয়, এটি মুসলমানদের আনুগত্যের প্রকাশও। তাই যারা এ ফরজ দায়িত্ব উপেক্ষা করবে, তাদের ক্ষেত্রে বারবার সতর্ক করার পর শেষ অবলম্বন হিসেবে শাস্তি কার্যকর হবে।

প্রদেশ সরকার জানায়, মসজিদগুলোতে ব্যানার টানানো হবে এবং জনগণকে আইন সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারণা চালানো হবে। পাশাপাশি জনসাধারণের অভিযোগ বা টহল দলের মাধ্যমে নামাজ বাদ দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

তরেংগানুতে এ ধরনের প্রয়োগ মালয়েশিয়ায় শরিয়াহ বাস্তবায়নের জন্য পাস দলের বৃহত্তর প্রচেষ্টারই অংশ। মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় দল পাস এর আগে হুদুদ শাস্তি (যেমন চুরির জন্য হাত কেটে ফেলা বা ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপ) চালুরও দাবি জানিয়েছিল।

সমালোচকেরা এ পদক্ষেপকে ‘চমকপ্রদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আইন ঘোষণার পর আইনজীবী আজিরা আজিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ইসলামে জোরজবরদস্তির কোনো স্থান নেই। তরেংগানুর পুরুষরা কেউই জুমার নামাজ ফরজ হওয়া নিয়ে দ্বিমত করে না। এটিকে অপরাধ হিসেবে আইনে বাঁধাই করার প্রয়োজন ছিল না। সচেতনতা আর প্রচারণাই যথেষ্ট হতো।

এশিয়া হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার অ্যাডভোকেটসের পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, ‘এ ধরনের আইন ইসলামকে খারাপভাবে উপস্থাপন করে। ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার মানে হলো না মানারও স্বাধীনতা। তাই তরেংগানু কর্তৃপক্ষ এ স্বৈরাচারী আইন দিয়ে মানবাধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন করছে।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে এ শাস্তি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

তরেংগানুর এই আইন প্রথম চালু হয় ২০০১ সালে এবং ২০১৬ সালে তা সংশোধন করে রোজা ভঙ্গ ও প্রকাশ্যে নারীদের হয়রানির মতো অপরাধে আরও কঠোর শাস্তি যোগ করা হয়।

মালয়েশিয়ায় দ্বৈত আইনব্যবস্থা চালু আছে। মুসলমানদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে শরিয়াহ আইন কার্যকর হয়, আর পাশাপাশি নাগরিক আইনেরও প্রয়োগ রয়েছে। মালয় আইন অনুযায়ী, সব জাতিগত মালয় মুসলিম হিসেবে গণ্য হন। দেশটির ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ মালয়, বাকিরা চীনা ও ভারতীয় সংখ্যালঘু।

শরিয়াহ আইন কোরআন ও হাদিসভিত্তিক। গত নভেম্বরে জোহর প্রদেশেের শীর্ষ ইসলামিক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, সেখানেও মুসলিম পুরুষদের জুমার নামাজে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এ ধরনের আইন প্রয়োগ হবে।

এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার শীর্ষ আদালত কেলান্তান প্রদেশেের শরিয়াহভিত্তিক ১৬টি আইন বাতিল করে দেয়। এসব আইনে সমকামিতা, যৌন হয়রানি, রক্ত সম্পর্কের মধ্যে যৌন সম্পর্ক, নারীর পোশাকসংক্রান্ত বিধিনিষেধ এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার মতো অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছিল। আদালত রায় দেয়, এসব বিষয়ে প্রদেশেের আইন করার এখতিয়ার নেই, কারণ সেগুলো ফেডারেল আইনের অধীনে।

এ রায়ের পর ইসলামপন্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করে এবং শরিয়াহ আইন সুরক্ষার দাবি জানায়।

সূত্র : ইনডিপেন্ডন্ট, রয়টার্স

ডিএম/রিয়া



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top