মঙ্গলবার, ২রা সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ই ভাদ্র ১৪৩২

অনলাইন লেনদেনে সাবধান, ৩ মাসে হাজারও প্রতারণা


প্রকাশিত:
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৮

আপডেট:
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:১৭

ছবি সংগৃহীত

মানুষের দৈনন্দিন কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার যতো বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বহু ধরনের অভিনব প্রতারণার ঘটনা। বাসা ভাড়া, জামা-কাপড় কেনাকাটা থেকে শুরু করে প্রেমের নামে যৌনফাঁদসহ বহু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। গেল প্রায় তিন মাসে পুলিশের কাছে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে এক হাজার ৮২টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ৪৫৭টি অনলাইন কেনাকাটা সংক্রান্ত।

এসব অপরাধের অভিযোগ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকেও। তবে গবেষণা বলছে, যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার মাত্র প্রায় ২০ শতাংশ অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে। বাকি সবই থেকে যায় আড়ালে। বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা এবং লোকলজ্জার ভয়ে অনেক ঘটনা বিচারের বাইরে থেকে যায়।

গত ১ জুন থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারে জমা পড়েছে ১০৮২টি। এসব ঘটনার মধ্যে আরও রয়েছে অনলাইনে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতারণা ৩২১টি, চাকরির প্রতারণা ৪৯টি, ঋণ দেওয়ার প্রতারণা ৩২টি, এনআইডি সংশোধনের নামে ১১টি, মোবাইল ফোন রিচার্জ অথবা ডাটা কেনার নামে ৬৮টি অভিযোগ।

এছাড়াও রয়েছে দরবেশ সেজে, বাড়া ভাড়া দেওয়ার নামে, পাসপোর্ট করানোর নামে, বৃত্তি দেওয়ার নামে, দামি পার্সেল পাঠানোর নামে, বিভিন্ন টিকিট বিক্রি, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয়, প্রেমের নামে যৌনফাঁদ পেতে ঘটনাও।

এসব ঘটনায় অপরাধীদের অন্যতম কৌশল হলো— বড় অংকের টাকা না নিয়ে বরং ছোট অংকের (৫০০ – ১০০০) টাকা অনেক বেশি মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া। এতে ক্ষতির মাত্রা কম হওয়ায় অনেকে আইনি ব্যবস্থা নিতে থানায় কিংবা আদালতে যান না। আর এতেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অপরাধীরা।

বহুল সংঘটিত অপরাধের মধ্যে রয়েছে প্রেমের নামে যৌনফাঁদে ফেলেও অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা। প্রথমে সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে একান্ত ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের পাঁয়তারা চলে। নারী-পুরুষ উভয়েই এ ধরনের ফাঁদে পড়ছেন। একবার কারো থেকে টাকা আদায় করতে পারলে বার বার টাকার জন্য চাপ দেয় অপরাধীরা।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি থানা কিংবা আদালতে মামলা বা লিখিত অভিযোগ না দিলে কারো বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। অন্যদিকে আইনি ব্যবস্থা নিতে গিয়ে অর্থ ও সময় ব্যয়কে আরও বেশি ক্ষতি হিসেবে দেখছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) খায়রুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিত্যনতুন প্রতারণার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফর্মগুলো বিশ্বস্ত না হলে নগদ লেনদেন করা উচিত নয়। এছাড়া মামলা ছাড়া শুধু মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করার বিধান নাই।

ক্ষতিগ্রস্তদের ৮০ ভাগই অভিযোগ করেন না: গবেষণা বলছে, অনলাইনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাদের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই অভিযোগ করেন না। ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৪’ শীর্ষক বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডশন (সিক্যাফ)।

সিক্যাফের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অপরাধের শিকারদের মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী এবং তরুণরাই (১৮-৩০ বছর বয়সী) প্রধানত এ ধরনের অপরাধের ভুক্তভোগী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যারা যান তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ ভুক্তভোগী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সিক্যাফের গবেষণা বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করা ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১২.৫০ শতাংশ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। অভিযোগ করেও কোনো ধরনের সুফল পাননি বলে জানিয়েছেন ৮৭.৫০ শতাংশ ভুক্তভোগী। নেটজগতে প্রতারণার শিকার হওয়াদের বেশির ভাগই শিক্ষিত নাগরিক।

সিক্যাফের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, অনলাইনে নিত্যনতুন প্রতারণা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই। যেসব ঘটনায় অপরাধী শনাক্ত হচ্ছে সেগুলোর পরিণতি মানুষের সামনে তুলে ধরা উচিত।

গ্রাহকদের ভাষ্য, হয়রানির শিকার হয়ে কোম্পানিগুলো এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানালেও মামলা না করার অযুহাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে মোবাইল ফোন কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ৬৮ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন জনৈক ওসামা বিন ওবায়েদ সাব্বির। পল্টন থানার জিডি নম্বর: ১৭৭৬। এ ঘটনার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ অপরাধী চক্রকে গ্রেফতার করতে পারেনি। থানায় অভিযোগের পর তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগেও তিনি অভিযোগ দিয়েছেন। তাতেও কাজ হয়নি।

পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে বাড়ছে মুদ্রা পাচার: এদিকে হুন্ডি, অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে সংঘটিত অবৈধ লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতনতামূলক নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ বলছে, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে এসব অপরাধ হুন্ডি প্রক্রিয়াকে সহজ ও ত্বরান্বিত করছে। এর ফলে একদিকে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে দেশ। এর ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিংয়ে পেমেন্টের মাধ্যম হিসেবে যেন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) হিসাবগুলো ব্যবহৃত হতে না পারে সেজন্য সংস্থাগুলোর প্রতি তাগিদ আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে বিকাশ, নগদ, ইউপেসহ এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতাও সেভাবে দেখা যায় না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top