পটুয়াখালীতে বেড়েছে সূর্যমুখীর চাষ
প্রকাশিত:
২৭ মার্চ ২০২৫ ১১:০৫
আপডেট:
৩১ মার্চ ২০২৫ ১৪:২০

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সূর্যমুখীর বীজের তেল নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে আগ্রহ বেড়েছে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ভোজ্য তেল আন্তর্জাতিক বাজারে স্থান করে নিতে পারবে এমন প্রত্যাশা কৃষি অধিদপ্তরের। একই সঙ্গে ফসলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হওয়ায় চলতি মৌসুমে কোটি টাকার বীজ ও তেল বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন পটুয়াখালীর কৃষকরা।
সমুদ্র উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকেই মাঠের পর মাঠে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। চৈত্রের তপ্ত রোদে নোনা জমিতে দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুলের রঙিন স্পন্দন দেখে বোঝা যায়, এই অর্থকারী ফসল নিয়ে কৃষকদের আগ্রহ রয়েছে। সূর্যমুখী চাষে ফলন ভালো হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে পটুয়াখালীর দুই সহস্রাধিক কৃষক জেলার ২ হাজার ৩৩৫ হেক্টর পতিত লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করছে। সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রনোদনা ও পরামর্শে এই চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি হেক্টরে ২ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার সূর্যমুখী চাষি রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমার এই জমিটা ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত খালি ছিল, শুধু বর্ষা মৌসুমে ধান চাষ করতাম। কারণ এখানে শুকনো মৌসুমে জমি লবণাক্ত থাকে। তাই কোনো ফসল হতো না। এ বছর ব্র্যাকের সহযোগিতায় ৬৬ শতাংশ জমিতে আমি সূর্যমুখী আবাদ করেছি। ফসল অনেক ভালো হয়েছে। ধারণা করছি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে।’
গলাচিপা উপজেলার সূর্যমুখী চাষি হাশেম মুন্সি আরও বলেন, ‘আবহাওয়ার অনুকূলতা ও সরকারি সহায়তার ফলে সূর্যমুখী চাষের গুণগত মান ও ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আমাদের আয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে।’
সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের কৃষক কালাম প্যাদা বলেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রাকের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সূর্যমুখী চাষে আমাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পতিত জমিতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
ভবিষ্যতে ব্রাকের সহায়তায় উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী চাষের বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে ব্রাকের জলবায়ু কর্মসূচি প্রকল্পের পরিচালক মো. লিয়াকত আলী জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে এই অর্থকরী ফসলের মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব।’
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কৃষি অধিদপ্তর ও বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের সহযোগিতায় পটুয়াখালীতে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, বিশেষ করে কলাপাড়ায়। ফলে এ অঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদ বেড়ে ৪০ কোটি টাকার সূর্যমুখীর তেল উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যা কৃষকদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
সূর্যমুখী চাষে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষকদের উদ্যম দেশের কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। এই অর্থকরী ফসল দেশের কৃষিখাতকে সমৃদ্ধ করতে এবং কৃষকদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: