বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১


স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত

দখল দূষণে মৃত প্রায় লৌহজং নদী!


প্রকাশিত:
১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০৮

আপডেট:
৮ মে ২০২৪ ২০:২৫

ছবি: সংগৃহীত

লৌহজং নদীর টাঙ্গাইল অংশের ৭৭ কিলোমিটার দখল ও দূষণের শিকার। শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদী উদ্ধার ও পুনরায় খননের দাবিতে টাঙ্গাইলে আন্দোলন করেছে স্থানীয়রা। টানা কয়েক মাস আন্দোলন করলেও বিশেষ সুপারিশে শুধু মির্জাপুর উপজেলায় উন্নয়ন কাজ শুরু হচ্ছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছে পুরো নদী পুনরায় খনন প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে স্থগিত রয়েছে।

এর আগে ৭৭ কিলোমিটার পুনরায় খননের বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। এছাড়া পুরো অংশে এক সঙ্গে কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে সমালোচনা হয়েছে।

এ দিকে শহরের উদ্ধার কাজ শুরু না হওয়ায় আবার দূষণ ও অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে নদীটি। আন্দোলনের পর প্রায় সাত বছর আগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলেও গত চার বছর যাবত কার্যক্রম না থাকায় অবৈধ দখল ও দূষণ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ফলে নদীটি মৃত খালে পরিণত হয়েছে। এতে নদীর দুই পাড়ের পরিবেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। প্রভাব পড়ছে পুরো জীববৈচিত্র্যে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ৪৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে লৌহজং নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারশ্বেরী হোমসসহ স্থাপনা রক্ষার প্রকল্প পাস করা হয়েছে। এ মাসেই টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে। এই কাজের মধ্যে রয়েছে লৌহজং ও এলেংজানী নদীর সংযোগস্থল মৈষ্ঠা এলাকা থেকে লৌহজং নদীর শেষ পর্যন্ত সাড়ে ২২ কিলোমিটার পুনঃখনন। কুমুদিনী হাসপাতালের দুই পাড়ে এক হাজার ৫০ মিটার এলাকায় সিসি ব্লক স্থাপন, ১৫০ মিটার এলাকায় রিটেইটিং ওয়াল নির্মাণ। ৭০০ মিটার এলাকায় মেরামত ও পুনর্বাসন কাজ করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, লৌহজং নদীটি সদর উপজেলার যুগনী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ৭৭ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন যাবত ড্রেজিং না করায় নদীটি তার নাব্যতা হারায়। এই সুযোগে দুই পাড়ের বাসিন্দারা কৌশলে স্থায়ী ভবণ, দেয়াল ও স্থাপনা নির্মাণ করে নদীটি দখল করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিল কারখানা, শহরের সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষিত করা হচ্ছে পানি। নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য ২০১৬ সালে আন্দোলনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। ওই সময়ে শহরের পুলিশ লাইনস হাজরাঘাট এলাকা থেকে বেড়াডোমা পর্যন্ত চার কিলোমিটার দূষণ ও দখল মুক্ত করা হয়। গত চার বছর যাবৎ কোনো কার্যক্রম না থাকায় নদীর পানি আর ব্যবহার উপযোগী নেই। নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে।

সদর উপজেলার করটিয়া এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, বিভিন্ন কারখানার বজ্য ফেলে নদীটি বিভিন্নভাবে দূষণ করা হচ্ছে। নদী থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এখন নদীটি দিয়ে মানুষের উপকারের আসার পরিবর্তে অপকার হচ্ছে। তাই নদীটি উদ্ধারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

নদী রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক রতন সিদ্দিকী বলেন, নদীটি উদ্ধারের জন্য আমরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করি। তারপরও একটি প্রভাবশালী মহল মির্জাপুরে কাজ করার চেষ্টা করছে। পুরো নদী একযোগে উন্নয়ন হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয় নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শুনেছিলাম নদীটি দখল ও দুষণমুক্ত করার জন্য ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এর কোন কার্যক্রম নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, লৌহজং নদীর উদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে এনজিও সমন্বয় সভায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষসহ পরিবেশের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। বর্তমানে আইন লঙ্ঘন করে নদী দখল করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ময়লা আবর্জনাসহ বাসার টয়লেটের লাইন নদীতে দিয়ে দূষণ করছে। নদী দখল ও দূষণে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। যথাযথ আইন প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মির্জাপুর অংশে ২২ কিলোমিটার এলাকায় নদী পুনঃখনন ও নদীর তীর সংরক্ষনের একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে শুকনো মৌসুমে কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া শহরের অংশে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে।

সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, চার বছর আগে নদীর ১৬ কিলোমিটার উন্নয়ন করতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ পুরো নদী এক যোগে উন্নয়ন করতে চেয়েছিল। করোনার কারণে সেটি আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। মির্জাপুর অংশে রনদা প্রসাদ সাহার ছেলে রাজীব সাহার হস্তক্ষেপে উন্নয়ন হচ্ছে। সেই কারণে মির্জাপুর অংশের কাজটুকু আলাদা করা হচ্ছে। প্রজেক্টের ডিপিপি পাস করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top