এক বছরে ৫১৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বেশি মেয়েরা
প্রকাশিত:
২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ১৬:০১
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ১১:৫৪

সদ্য গত হওয়া ২০২৩ সালে সারাদেশে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৬০ দশমিক ২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। আর শিক্ষার স্তর বিবেচনায় আত্মহত্যা বেশি স্কুলগামীদের, ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সমীক্ষা তুলে ধরে।
সংগঠনটির রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী বলেন, গত বছর আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলে ২০৪ জন, নারী ৩০৯ জন। ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেন ৫৩২ জন। এ বছর কিঞ্চিৎ কমলেও তা আশানুরূপ নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী (৪৪.২০%) আত্মহত্যা করেন। কলেজ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪০ জন (২৭.২%), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯.১%) এবং মাদরাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৪%)।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৭ জন, খুলনা বিভাগে ৬৪ জন, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ৪৩ জন করে, ময়মনসিংহে ৩৬ জন এবং সিলেট বিভাগে ১২ জন।
আত্মহনন করা মোট শিক্ষার্থীর ৬০.২% মেয়ে। তাদের আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৮.৮% আত্মহত্যা করেন অভিমানে, ১৬.৫% প্রেমঘটিত কারণে, ৮.৪% মানসিক ভারসাম্যহীনতায়, ৭.১% পারিবারিক কলহে, ৩.৯% যৌন হয়রানি, ৪.২% পড়ালেখার চাপে ও অকৃতকার্য হয়ে, ১.৬% পারিবারিক নির্যাতনে, ০.৬% অপমানে এবং ২.৯% কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে আত্মহত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোট শিক্ষার্থীর ৪৪.২% স্কুলগামী গত বছর আত্মহত্যা করেন। কলেজ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪০ জন (২৭.৩%), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ১৮ জন (১৯.১%) ও মাদরাসার শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৫%)।
আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, বয়ঃসন্ধিকালে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ সময়টাতে বেশি রাগ-অভিমানের প্রবণতাও থাকে। গেল বছরের চিত্রে দেখা যায়, ১৩-১৯ বছর বয়সী ৩৪১ শিক্ষার্থী (৬৬.৫%) আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ২২২ জনই মেয়ে; বিপরীতে ছেলে ১১৯ জন।
সংবাদ সম্মেলনে আত্মহত্যা কমাতে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরে আঁচল ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে মেন্টর নির্ধারণ এবং উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেন্টাল হেলথ কর্নার চালু করা। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করা। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ট্যাবু ভাঙতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রচার চালু করা।
এছাড়া সুপারিশে আরও বলা হয়, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতা শেখানো। যেকোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের কৌশল, মানকি চাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানো। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যদের আত্মহত্যার আলামত সম্পর্কে ধারণা বিস্তৃত করা। মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ইন্সুরেন্স বীমার আওতায় আনা, যেন তা সকলের জন্য সাশ্রয়ী হয়। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে টোল ফ্রি জাতীয় হট লাইন নম্বর চালু করা ইত্যাদি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: