শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১


যেসব কারণে করোনার পরবর্তী ঢেউ আঘাত হানতে পারে


প্রকাশিত:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২২

আপডেট:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:২৬

ফাইল ছবি

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে। তবে শিগগিরই ভাইরাসটির আরেকটি ঢেউ আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর নভেম্বর থেকে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার নেমে এলেও মার্চ থেকে আবারও সেই হার উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং জুন-জুলাই মাসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এমন অবস্থায় নতুন করে আতঙ্কের কারণ হয়েছে তৃতীয় ঢেউ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাবে। তবে বাংলাদেশে তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানার কারণ হিসেবে সম্ভাব্য কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

কারণগুলো হলো-

টিকা ও হার্ড ইমিউনিটি

গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, মোট জনসংখ্যার বিপরীতে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার হারে অনেক পিছিয়ে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধানদের নিয়ে গঠিত কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের এক ওয়েবসাইটে এসব তথ্য জানা যায়। ওয়েবসাইটে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২.৬১% মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে জনসংখ্যার অনুপাতে এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে ৪.১৮% মানুষকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন প্রায় দুই কোটি ১৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন, এক কোটি ৪৪ লাখ মানুষ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই হার একেবারেই যথেষ্ট নয়।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ তাদের বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে। এ কারণে সংক্রমণ ঠেকানো না গেলেও গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে। ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়ছে। এজন্য টিকা দেওয়া অবশ্যই দরকার।’ সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি টিকা সংগ্রহে তৎপরতা বাড়াতে না পারে এবং বয়স নির্বিশেষে মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশকে টিকার আওতায় আনতে না পারে তাহলে তৃতীয় ঢেউ বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ।

লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিথিলতা

দেশে গত মাস থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার কমতে শুরু করায় লকডাউন তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সব অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞায় কিছু শিথিলতা আনা হয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের শেষে সংক্রমণের হার কমে আসার পর দেশের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ও বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। সংক্রমণ বাড়তে থাকা অবস্থায় এপ্রিলে লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাও নেওয়া হয়।

এরপর রমজান মাসে কেনাকাটা চালু রাখতে খুলে দেওয়া হয় শপিং মল, দোকানপাট। সেইসঙ্গে ঈদে গাদাগাদি করে বাড়ি যাওয়ার চাপ তো ছিলই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে এ ধরনের অসচেতনতার কারণে সংক্রমণ কিভাবে হু হু করে বেড়েছে সেটা চলতি বছরের মাঝামাঝি এসেই টের পাওয়া যায়। এই উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ করোনার আরেকটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

মিউটেশন

করোনাভাইরাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এটি টিকে থাকতে অন্যান্য ভাইরাসের মতো প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন বা মিউটেশন করতে থাকে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ মূলত ভাইরাসের মিউটেশনের কারণে হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের শতাধিক মিউটেশনের কথা জানতে পেরেছে গবেষকরা। এর মধ্যে চারটি ভ্যারিয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিন্তিত করা হয়েছে। সেগুলো হল- আলফা (প্রথম ধরা পড়ে যুক্তরাজ্যে), বেটা (দক্ষিণ আফ্রিকা), গামা (ব্রাজিল) এবং ডেল্টা (ভারত)।

সিদ্ধান্তে সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতি

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বারবার সিদ্ধান্ত সংশোধন ও বদল করতে দেখা গেছে। একবার কঠোর লকডাউনের কথা বলে, কয়েকদিন পর থেকেই তা সীমিত আকারে শিথিল করা হয়েছে। ঢাকার বিমানবন্দরে আরটি পিসিআর ল্যাব বসানো নিয়ে জটিলতা সিদ্ধান্তহীনতার একটি উদাহরণ হতে পারে।

এ ছাড়া টিকার ভুয়া রিপোর্ট, মাস্ক কেলেঙ্কারি, চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় ও সংগ্রহে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও করোনাভাইরাসের মোকাবিলার বিষয়টিকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ ধরণের দুর্নীতি ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে দীর্ঘসূত্রিতা ও অদক্ষতা বাংলাদেশকে করোনাভাইরাসের পরবর্তী ঢেউয়ের দিকে ধাবিত করতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসা

চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার পর হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ দেখা গিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারে শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সরবরাহ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা বাড়লেও বড় ধরনের ঢেউ সামাল দিতে তা এখনও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া জনসংখ্যার অনুপাতে হাসপাতালগুলোর ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। স্বাস্থ্য খাতে খালি পদগুলো পূরণে দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার ওপর তারা জোর দেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোভিড পরিস্থিতি ভালো থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার এই ত্রুটিগুলো দূর করে বাংলাদেশের উচিত হবে সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top