অভিভাবককে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললে করণীয় কী
প্রকাশিত:
১১ জুন ২০২৫ ১৯:০২
আপডেট:
১৩ জুন ২০২৫ ০৪:২১

ইসলাম ধর্মে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্তসাপেক্ষে সম্পাদন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে একজন নারীর জন্য অভিভাবকের (ওলি) অনুমতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও বাস্তবে দেখা যায়, অনেকেই তা উপেক্ষা করে গোপনে বা একতরফাভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হলো—শরিয়তের দৃষ্টিতে অভিভাবককে না জানিয়ে বিয়ে করলে সেই বিয়ের হুকুম কী? এবং এর পরবর্তী করণীয় কী?
প্রাপ্তবয়স্কা (সাবালিকা) মেয়ে হলে বিধান কী
যদি মেয়ে প্রাপ্তবয়স্কা হয়, তাহলে শরিয়তমতে তার বিয়ে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াও সহিহ (বৈধ) হয়ে যায়। অর্থাৎ এ বিয়ে বাতিল নয়। তবে তা শরিয়তের আদর্শ পদ্ধতি নয়। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী, মেয়ের সম্মতির পাশাপাশি অভিভাবকের সম্মতিও থাকা উত্তম ও কাম্য। (আলবাহরুর রায়েক: ৩/১০৯; হেদায়া; ফাতহুল কাদির: ৩/১৫৭; আলমুহিতুল বুরহানি: ৪/৫৬)
অপ্রাপ্তবয়স্কা (নাবালিকা) মেয়ে হলে বিধান কী
যদি মেয়ে প্রাপ্তবয়স্কা না হয়ে থাকে (অর্থাৎ নাবালিকা হয়), তাহলে তার বিয়ে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া সহিহ হয় না। এ বিয়ে শরিয়তের দৃষ্টিতে বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। এমন বিয়ে করলে শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে নতুন করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিয়ের আগে সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে সতর্কতা
ইসলামে বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, দেখা-সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ হারাম ও গুনাহের কাজ। এমনকি যদি তা বিয়ের উদ্দেশ্যেও হয়, তবুও তা বৈধ নয়। এ ধরনের সম্পর্ক দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতির কারণ হতে পারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩২)
প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে গোপনে বিয়ে করে ফেললে করণীয়
এই বিয়ে সহিহ হয়েছে, তবে তা শরিয়তসম্মত আদব মেনে করা হয়নি। তাই এমন অবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, পারিবারিক সুসম্পর্ক রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতে বড় কোনো ভুল এড়িয়ে চলা কর্তব্য। আর অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের ক্ষেত্রে এরকম বিয়ে বাতিল। এক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতির ভিত্তিতে নতুন করে শরিয়তসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
গোপনে করা বিয়ে টিকিয়ে রাখবেন নাকি ভেঙে ফেলবেন?
ইসলামি শরিয়তে প্রাপ্তবয়স্ক নারী অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করতে পারলেও বিষয়টি সর্বাবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিস শরিফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, যদি পাত্রের সঙ্গে কুফু না মিলে বা পারিবারিক সম্মানহানি ঘটে, তাহলে পিতা আদালতের মাধ্যমে সেই বিয়ে বাতিল করতে পারেন। তবে, মনে রাখতে হবে- হাদিসে (সহিহ মুসলিম ১৪২১) বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কা নারী তার নিজের বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। অপরদিকে, এমন হাদিসও রয়েছে যেখানে একজন মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (স.) সেই বিয়ে বাতিল করে দেন (সাঈদ বিন মানসুর: ৫৬৮; মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ১০৩০৪, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৫৯৫৩)। আবার কোথাও বিয়ে বহাল রাখা এবং মেয়েকে সিদ্ধান্তের অধিকার দেওয়ার কথাও আছে (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৭৪)। এসব দলিল থেকে বোঝা যায়, গোপনে করা বিয়েতে ‘কুফু’র শর্ত পূরণ না হলে আদালতের মাধ্যমে তা ভেঙে দেওয়ার সুযোগ থাকলেও, শর্ত পূরণ হলে তা ভেঙে দেয়ার এখতিয়ার অভিভাবকের থাকে না।
ইসলামি শরিয়তে বিয়ের আদর্শ নির্দেশনা
বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতি থাকা উত্তম ও নিরাপদ পন্থা। তবে, মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়—তার সম্মতিও অপরিহার্য। ছেলে বা মেয়ের উভয়েরই উচিত—পিতামাতার পরামর্শকে মূল্য দেওয়া এবং পারিবারিক সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
শেষ কথা, অভিভাবককে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললে শরিয়তের দৃষ্টিতে সিদ্ধান্ত নির্ভর করে মেয়ের বয়সের ওপর। প্রাপ্তবয়স্কা হলে বিয়ে সহিহ হলেও শরিয়তের রীতি লঙ্ঘিত হয়। নাবালিকা হলে বিয়ে সহিহ হয় না, বরং তা বাতিল। এছাড়া যেসব সম্পর্ক থেকে এ ধরনের ঘটনার সূত্রপাত হয়, সেগুলোকেই ইসলাম নাকচ করে। তাই অনুশোচনায় ফিরে আসা এবং শরিয়তের বিধান মেনে চলাই একমাত্র মুক্তির পথ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: