রবিবার, ২২শে জুন ২০২৫, ৮ই আষাঢ় ১৪৩২


শরাবান তহুরা কী, কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ


প্রকাশিত:
২২ জুন ২০২৫ ১৩:১৮

আপডেট:
২২ জুন ২০২৫ ১৭:৩০

ছবি সংগৃহীত

পৃথিবীর জীবন ক্ষণিক, কিন্তু তার কর্মফল চিরস্থায়ী। যারা আল্লাহর বিধান মেনে জীবন যাপন করে, তাদের জন্য পরকালে রয়েছে অনুপম পুরস্কার জান্নাত। সেই জান্নাত কেবল একটি স্থান নয়, বরং তা শান্তির পরম কেন্দ্র, যেখানে থাকবে অপূর্ব নেয়ামত, সম্মান ও পূর্ণতা। জান্নাতের বিশেষ নেয়ামতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘শরাবান তহুরা’ (شَرَابًا طَهُورًا) অর্থাৎ এক পবিত্র পানীয়।

এটি জান্নাতিদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান। এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করব ‘শরাবান তহুরা’ কী, এর প্রকৃতি কী, কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে কীভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং এর আত্মিক তাৎপর্য কী।

শরাবান তহুরা অর্থ ও ব্যাখ্যা
শরাব (شَرَاب) অর্থ মদ বা পানীয়, তাহুর (طَهُور) অর্থ পরিশুদ্ধ, পূত-পবিত্র। শরাবান তহুরা অর্থ পবিত্র পানীয়। এটি দুনিয়ার মদের মতো নয়; বরং তা হবে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপূর্ণ পাত্রে শুভ্ৰ উজ্জ্বল, যা হবে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। তাতে ক্ষতিকর কিছু থাকবে না এবং তাতে তারা মাতালও হবে না।’ (সুরা আস-সাফফাত: ৪৫–৪৭)

কোরআনের আলোকে শরাবান তহুরা
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ سَقٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابًا طَهُوۡرًا ‘আর তাদেরকে তাদের প্রতিপালক পান করাবেন শরাবান তহুরা বা এক পবিত্র পানীয়।’ (সুরা ইনসান: ২১)

তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, ‘তাহুর অর্থ পবিত্রতাপূর্ণ। এ পানীয় মুছে দেবে নাপাকি, দুঃখ, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা সবকিছুকে। এটি জান্নাতিদের জন্য এমন এক সান্ত্বনা হবে, যা দুনিয়ার কোনো পানীয়র সাথে তুলনা চলে না।
তাফসিরে কুরতুবিতে এসেছে, এই পানীয় দুনিয়ার মদের মতো নয়; এটি কোনো নেশা সৃষ্টি করে না। এটি জান্নাতের এমন এক ঝর্ণা বা ফোয়ারা থেকে আসবে যার স্বাদ, ঘ্রাণ ও পবিত্রতা সব দিক থেকে শ্রেষ্ঠ। এটি একাধারে স্বাদে অতুলনীয় এবং আত্মিক প্রশান্তিদায়ক।

পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘সেখানে তারা একে অপরের নিকট হতে গ্রহণ করবে (মদ ভরা) পান-পাত্র, যা হতে পান করলে কেউ অসার কথা বলবে না এবং পাপ কর্মে লিপ্ত হবে না। (সুরা তুর: ২৩)
‘দুনিয়ার মদ বিবেক নষ্ট করে, মাথা ব্যথা সৃষ্টি করে, পেট ব্যথার উদ্রেক করে, শরীর অসুস্থ করে, রোগ-ব্যাধি টেনে আনে, কিন্তু জান্নাতের শরাব এমনটি নয়।’ (ফাতহুল কাদির)

হাদিসের আলোকে শরাবান তহুরা
জান্নাতের পানীয় নিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ হাদিস রয়েছে, যা এর তাৎপর্য আরও স্পষ্ট করে। সহিহ মুসলিমে ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করবে, আখেরাতে সে তা পান করতে পারবে না। কিন্তু যদি তাওবা করে। (সহিহ মুসলিম: ৫০৫৪)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতে রয়েছে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর এবং মদের সাগর। তারপর সেগুলো থেকে আরো নালাসমূহ প্রবাহিত করা হবে। (তিরমিজি: ২৫৭১)

শরাবান তাহুরা জান্নাতি পবিত্রতার প্রতীক
আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার: এই নেয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকেই সরবরাহ করা হবে। এটি শুধুই পানীয় নয়, বরং জান্নাতিদের সম্মান, পবিত্রতা ও চূড়ান্ত প্রশান্তির এক প্রতীক। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে জীবন অতিবাহিত করেছে, তাদের জন্য আল্লাহ কত শ্রেষ্ঠ পুরস্কার সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

রুহানি পবিত্রতা: জান্নাতে প্রবেশের পর এই পানীয় তাদের পরিপূর্ণ পবিত্র করে দেবে; মনোবেদনাহীন করে তুলবে।

দুনিয়ার কষ্টের প্রতিদান: যারা দুনিয়ায় সবর করেছে, নামাজ কায়েম করেছে, নিজের হালাল কামাই থেকে দান-সদকা করেছে, তাদের জন্যই এই পুরস্কার।

শেষ কথা, শরাবান তহুরা জান্নাতের এমন এক অনুপম নেয়ামত, যার কোনো দুনিয়াবি তুলনা নেই। এটি শুধু শারীরিক প্রশান্তি নয়, আত্মিক পবিত্রতা বর্ধনকারীও। মুমিন হিসেবে আমাদের উচিত সেই জান্নাতের পানীয় লাভের লক্ষ্যে এই পার্থিব জীবনে পবিত্রতা, ঈমান, ইবাদত ও নৈতিকতা বজায় রাখা। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top