শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২শে ভাদ্র ১৪৩২


ক্যাম্পে যোগ দিলো ‘নতুন মুস্তাফিজ’, কতটা কার্যকর হবে দ্বীপ


প্রকাশিত:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:১৮

আপডেট:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৯

ছবি ‍সংগৃহিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় বেড়ে ওঠা তানভীর হোসেন দ্বীপের। বর্তমানে সে নর্থ বেঙ্গল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। গেল এক বছর হলো টেপ টেনিস বলের বাইরে ক্রিকেট বলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে দ্বীপের। বাঁ-হাতি কাটার-ইনসুইংয়ে ইতোমধ্যে সে নজর কেড়েছে।

গেল বছর ২৯ ক্রিকেটারকে নিয়ে এই ক্যাম্প হয়েছিল। এবার দ্বীপসহ সেই সংখ্যা ৩০ জন হয়েছে। হঠাৎ করে কিশোর এই পেসারকে নিয়ে আলোচনা কেন সেই প্রশ্ন জাগতেই পারে। জানিয়ে রাখা ভালো– জাতীয় দলের তারকা পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের মতো কাটার-ইনসুইং আছে ছোট্ট দ্বীপের বোলিংয়েও।

যত্ন নিলে রত্ন হতে পারেন এই ক্রিকেটার, এমনটাই মনে করছেন ক্রিকেটে তাকে নির্বাচন করা নির্বাচকও। গেল বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোচ আলমগীর কবিরের নজরে আসে দ্বীপ। পরে বিভাগীয় ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিল, তবে সেখানেই থেমে যায় তার পথচলা। সবশেষ গত মাসে বিসিবির পাইলট প্রোগ্রামিংয়ের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে ইয়ং টাইগার চ্যালেঞ্জ ট্রফিতে মোহাম্মদ রফিক, মেহেরাব হোসেন অপি, জাভেদ ওমর বেলিম, হাসিবুল হোসেন শান্তদের নজর কাড়ে দ্বীপ। এমন একজন বাঁ-হাতি বোলারই খোঁজার কথা জানিয়েছেন হাসিবুল শান্ত। এরপরই তাকে পরিচর্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঢাকা পোস্টকে বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক শান্ত জানান, ‘রাজশাহীতে এর আগের সিলেকশনে ২০ জন ছিল সেখানে সে ছিল না। আমরা এবার যখন গেলাম তখন ওকে দেখে আমরা চয়েজ করেছি। সে কতদূর যাবে কী করবে আগে থেকে এসব মন্তব্য না করাই ভালো। ওর ভেতরে কিছু প্রতিভা আছে, এখন বাকিটা দেখা যাবে কীভাবে ওকে আরও উন্নত করা যায় সেটা আমাদের দায়িত্ব।’

প্রতিভা থাকলেও, দ্বীপকে নিয়ে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করতে চান না শান্ত, ‘আমাদের বাঁ-হাতি বলার কম, দ্বীপের বলে পেস আছে ভালো। সামনের দিকে কীভাবে আমরা এটাকে কাজে লাগাতে পারি সেটা দেখব। এখন যে অনূর্ধ্ব-১৭ ক্যাম্প রয়েছে সেখানে ও রয়েছে। আগে থেকে আসলে এতকিছু বলতে চাই না, তবে তার বলে কাটার আছে। মাত্র শুরু তো এখন যদি সবকিছু নিয়ে আলোচনা করি, ওর বয়স কম, প্রেশারে পড়ে যাবে। খেলুক, প্র্যাকটিস চালিয়ে যাক।’

পরে দ্বীপ নিজের উঠে আসার গল্প বলছিলেন এভাবে, ‘আমাদের লোকাল একটা ক্লাব ছিল পিসিবি নামে। সেখানে একদিন টেপ টেনিস খেলা হয়, কিবরিয়া নামে একজন বড় ভাই এসেছিলেন, যিনি প্রথম লিগে ডিভিশন খেলেন। তিনি খেলতে এসে আমার বল দেখে বলেছিলেন যে আমার ভবিষ্যৎ ভালো, আমি যেন নিয়মিত খেলি।’

পর্যায়ক্রমে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলের ক্যাম্পে ডাক পড়ে দ্বীপের, ‘আমাকে জেলা অনূর্ধ্ব-১৪ তে ট্রায়াল দিতে বলেছিল। সেখানে কোচদের ভালো লেগে যায়, পরে আলমগীর স্যার এসেছিল ক্যাম্পে। উনার সামনে ভালো করায় স্যার বলেছিল তুই তো ভালো বোলার। তারপর আমার সব খোঁজ-খবর রেখেছিল। ক্যাম্পে ডাক পেয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ খেলেছি। আবার বাদ পড়ে যাই, এর কারণ জানিনা অবশ্য।’

আদর্শ হিসেবেও মুস্তাফিজকে অনুসরণ করে আসছে এই কিশোর, ‘পরে ইয়ং টাইগার্স চ্যালেঞ্জার্স ট্রফি হলে সেখানে ভালো করেছি। সবমিলে আসলে আমার ক্যারিয়ারটা বেশি দিনের না। এক বছরের মতো আরকি। আমার বোলিং অ্যাকশনে একটু সমস্যা আছে হয়তো, ওটা ঠিক করতে হবে। আর কাটারটা মোটামুটি পারি। আমি ছোটবেলা থেকে ফলো করতাম মুস্তাফিজ ভাইকে। তাকে দেখেই এটা চেষ্টা করতাম কীভাবে করতে হয় উনি আমার আইডল।’

সে হিসেবে ফিজের জার্সি নম্বরের প্রতিও আগ্রহ ছিল দ্বীপের, ‘আমি আসলে ৯০ নম্বর জার্সি চেয়েছিলাম, তবে আলমগীর স্যার বলেছিল যে ৪৬ নম্বরটা নে। বোলিংয়ে প্রেসার কাজ করে এই সময়। সবাই যখন দেখে বল করতেছি, তখন হবে কী হবে না, ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। কীভাবে আরও ভালো করা যায় সেটা চেষ্টা করতেছি। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের আলহামদুলিল্লাহ। অনুশীলনের জন্য তেমন কোনো সমস্যা নেই, সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে।’

ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দ্বীপের। সুযোগ পেলে মুম্তাফিজের থেকেও শিখতে চান কাটার ও স্লোয়ার, ‘নিজের সেরা সাপোর্টটাই দেবো ক্রিকেটের জন্য। সুযোগ পেলে অবশ্যই কাটারটা শিখব, মুস্তাফিজ ভাইয়ের সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি। যদি সুযোগ হয় প্রথমে কাটারটা শিখতে চাইব। মানে ওই গ্রিপটা কিভাবে ধরে বা কীভাবে কাজ করতে হয় ওটা শিখব।’

পরে দ্বীপের কোচ আলম কবির জানালেন তার বোলিংয়ের শুরু দিককার গল্প। দ্বীপ আসলেই মুস্তাফিজের মতো হতে পারবে কি না সেই আভাসও দিলেন, ‘ওকে নিয়ে আসলে এখনই এত কিছু বলার সময় নেই। খেলুক এখন, এমনি ভালো আছে এতটুকু বলতে পারি। যেটা নতুনত্ব ওর বলে সে একই জায়গায় বোলিং করতে পারে। যে কাটারটা মারতে পারে সেটা ভালো লেগেছিল। জোরে যে বলটা করে সেটা ব্যাটসম্যানের ভেতরের দিকে ঢোকে ভালো।’

‘বয়স যেহেতু কম, আন্ডার ১৭ প্লাস। বলের গতি ১২৫ মতো আছে এখন। এটা উন্নতি করে যদি ভালো করতে পারে, অবশ্যই দেশের জন্য একটা ভালো কিছু হবে। গত বছরই প্রথম আমার চোখে পড়েছিল, এরপর আমার সঙ্গে ওর কথাবার্তা হয়। বলব না যে কাটাররা খুব ভালো করছে। একদম গ্রাম থেকে উঠে এসেছে কথা বললে তাকিয়ে থাকে। একটু দ্রুত ধরতে পারে কম। যেটা হয় গ্রামের ছেলের, শহরে আসলে কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। যা বলি করে দেখায়, প্রথমে বুঝতে একটু দেরি হয় আরকি’, আরও যোগ করেন দ্বীপের কোচ।

অনূর্ধ্ব-১৭ দলের প্রধান কোচ হান্নান সরকারেরও ভালো লেগেছে দ্বীপকে। ক্রিকেটের ইতিহাস বলে, প্রতিভার উত্থান হয় ঠিক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়েই। মুস্তাফিজ যেমন সাতক্ষীরার এক গ্রাম থেকে উঠে এসে বিশ্বজয় করেছিলেন, তেমনিভাবেই হয়তো কোনো একদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসচালকের ছেলে তানভীর হোসেন দ্বীপও জাতীয় দলের জার্সি পরে মুগ্ধ করবে সেটাই প্রত্যাশা সবার।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top