নুসরাত ফতেহ আলীর মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা ১০ কালজয়ী গান
 প্রকাশিত: 
 ১৬ আগস্ট ২০২৫ ১৪:৩০
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৩
                                কয়েকজন সংগীতশিল্পী আছেন, যারা একটি নির্দিষ্ট ঘরানার সংজ্ঞাই পাল্টে দিয়েছেন। কাওয়ালির জগতে তেমনই একজন অমর সংগীতশিল্পী হলেন ওস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলী খান।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা সুফি বাণীগুলোকে নতুন প্রাণ দেওয়া থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী তার শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলা— তিনি ছিলেন সত্যিকারের শাহেনশাহ-ই-কাওয়ালি (কাওয়ালির সম্রাট)।
উপমহাদেশের এই কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আজ ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। নুসরাত ফতেহ আলী খানকে স্মরণ করে তার ১০টি কালজয়ী সৃষ্টির একটি তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।
‘মস্ত মস্ত দম মস্ত’
রহস্যময় এই কাওয়ালিটি দিয়ে তালিকা শুরু করা যাক। কিংবদন্তী আছে, এটি প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বছর আগে আমির খসরু লিখেছিলেন, যা পরে বুল্লে শাহ কর্তৃক অভিযোজিত হয়। নূর জাহান, আবিদা পারভীন এবং জুনুন-এর মতো শিল্পীরা এর বিভিন্ন সংস্করণ গাইলেও, নুসরাত ফতেহ আলি খানের পরিবেশনায় এর মধ্যে এক অন্যরকম শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
‘ইয়ে যো হালকা হালকা সুরুর’
এটিও নুসরাতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি কাওয়ালি। এখানে আধ্যাত্মিক জ্ঞানলাভের অভিজ্ঞতাকে মাতাল হওয়ার অনুভূতির সাথে তুলনা করা হয়েছে, যেখানে ভক্ত নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ঈশ্বরের সাধনায় মগ্ন হন।
‘কালি কালি জুলফোঁ কে ফান্দে না ডালো’
নুসরাতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাওয়ালিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। যে কোনো অনুষ্ঠানে এই গান পরিবেশিত হলে সেখানে এক ভিন্ন আমেজ তৈরি হয়। অনেকেই এর সংস্করণ গাইলেও মূল গানটির ধারে কাছেও কেউ পৌঁছাতে পারেননি।
‘সোচতা হুঁ’
এই কাওয়ালিটি সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া নির্দোষতা বা সারল্যের প্রতীক। অনলাইনে অনেক রিমিক্স হওয়ার কারণে এটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
‘সাঁসো কি মালা’
ষোড়শ শতাব্দীর হিন্দু রহস্যবাদী কবি মীরা বাই-এর লেখা এটি। নুসরাত ১৯৮০ সালে তার প্রথম ভারত সফরে এই কাওয়ালিটি পরিবেশন করেন। আজও এটি ভারত ও বাংলাদেশের মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়।
‘ইয়া গাউস ইয়া মীরান’
এটি নুসরাতের সর্বশেষ অ্যালবাম ‘চেইন অফ লাইট’ থেকে নেওয়া একটি গান, যা গত বছর প্রকাশ পেয়েছে। অ্যালবামটি মূলত ৩৪ বছর আগে রেকর্ড করা কিছু হারিয়ে যাওয়া গানের সংকলন।
‘আজা তেনু আঁখিয়া উদিক দিয়া’
নুসরাতের চিরসবুজ পাঞ্জাবি গানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই গানটি তাকে তার জন্মস্থান জলন্ধর ও ফয়সালাবাদে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
‘মস্ত নজরোঁ সে আল্লাহ বাঁচায়ে’
আরেকটি জনপ্রিয় কাওয়ালি। এতে আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের শক্তিকে স্বীকার করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে, যেন সেই মোহে কেউ আকৃষ্ট না হয়। ‘কালি কালি জুলফোঁ’ এবং ‘সোচতা হুঁ’-এর মতোই এটিও তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়।
‘মেরা পিয়া ঘর আয়া’
এটি বুল্লে শাহ-এর একটি উৎসবের কবিতা। এতে দীর্ঘ অপেক্ষার পর তার গুরু-এর সাথে পুনর্মিলনের কথা বলা হয়েছে। কোক স্টুডিওতে ফরিদ আইয়াজ ও আবু মুহাম্মদের পরিবেশনায় এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি নুসরাতের ১৯৭৭ সালের নিজস্ব সংস্করণ।
`লংগিং’
সবশেষে, কানাডীয় গিটারিস্ট মাইকেল ব্রুকের সাথে নুসরাতের যৌথ অ্যালবাম ‘নাইট সং’ থেকে একটি গান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘তেরে বিন নহি লাগদা দিল মেরা’-এর এই সংস্করণটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি দারুণ ফিউশন এবং এটি অসাধারণভাবে অবহেলিত একটি গান।
নুসরাত ফতেহ আলী খান আজও তার কণ্ঠের যাদুতে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। তার সংগীত শুধু একটি শিল্প নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যাবে।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: